১২ ফেব, ২০১১

এন্টি গল্প > পেটকাটি চাঁদিয়াল > ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৩৯


আট নম্বর সিগারেটটা শেষটান দিয়ে ছুঁড়ে ফেলল ছেনো। লক্ষণ খারাপ মনে হচ্ছে। সকাল ৯টায় মতিঝিলে এসে চার পাঁচবার এটেম নিয়েছে। ফেল। স্টকএক্সচেঞ্জ,ডলারের হাট,আরামবাগের মোড়,বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে, সব ট্রাই শেষ।এবি ব্যাংকের সামনে বটতলায় বসে এখন অলস সময় কাটাচ্ছে।

ছেনো। আগে-পরে কিছু নেই। সোজাসাপ্টা- ছেনো। কাগদি নামের বিলঘেরা এখন্ড গ্রামে জন্মেছিল ছেনো। ছাগলে খাওয়া খেজুরগাছের মত বেড়েছিল। কুঁতে কুঁতে। এই তিরিশেও তাই আঠারোর আদল.....................................................
-মামা চা দেও। আর একটা নেভী।
-কয়ডা হইল?
-তোমার কী?
-কাম ধান্ধা অয় নাই?
-হবে,হবে। ছেনো কোনদিন খালি হাতে ফেরে না।

ছেনোর জীবনে বাপ বলে কিছু নেই। মা কে ‘ব ‘ দিয়ে অনেক কিছু বলতে শুনেছে...বালতি-বালিশ-বাটি-বাড়ি-বাঁশ-বাল......কিন্তু কোন দিন ‘বাপ’ বলতে শোনেনি। সে কারণে বাপ ব্যাপারটা ছেনোর মগজে নেই। বড় হয়ে আড়ে-বাড়ে শুনেছে কেউ কেউ ওকে জারজ বলে । এ নিয়ে ওর কোন মাথাব্যাখা নেই।

-ফেডারেশনের সামনে গ্যাদারিং মামা, কেস কী? জানো কিছু ?
-কেস আর কি, বাল। দেহগা কোন বিলাতি আইছে...
ছেনো আশাবাদী হয়ে ওঠে। পরণেই চুপসে যায়। দুই বিলাতি। তিন কুড়ি দেশী দামড়া। বিলাতিরা চ্যাপটা মত একটা গাড়ি থেকে নামে। তিনকুড়ি দেশী দামড়া টুথপেষ্টের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। সাথে এককুড়ি খোঁচর । প্রজেক্ট বাতিল।

চা। নেভী। অলস বসে থাকা। তার মানে পেছনে ফিরে যাওয়া। ছেনোর দু’তিন বছর বয়সে ওর মা ওকে নিয়ে গোলাপবাগ বস্তিতে ওঠে। একা ঝুপড়িতে ছেনো গু-মুত ছেনেছুনে কাগজ পাতা ছাইমাটি খেয়ে খেয়ে বড় হয়েছে। ইস্কুলেও পড়েছে। দশ ক্লাস। ওর মা যে বাড়ি কাজ করে সেই সায়েব যেদিন মাকে রাতে বাড়ি আসতে দিল না,তার পর দিনই ছেনো সায়েবে বাড়ির গেটে তক্কে তক্কে যেয়ে সায়েব গাড়িতে ওঠার সময় পেছনদিক থেকে জড়িয়ে ধরে কামড় বসিয়ে দিল পাছায়। প্যান্ট ছিঁড়ে গেল। ড্রাইভার আর সায়েব লাথি মারতে মারতে ছেনোকে রাস্তায় এনে ফেলল। ছেনো উঠে দাঁড়িয়ে দেখল ওর হাতে একটা মানিব্যাগ !সেই থেকে ছেনো এমপ্লয়ি। সকাল-রাত ডিউটি। বেতন নিদৃষ্ট নয়। ছেনো পেশাদার পকেটমার...........................................


হঠাৎ ছেনো উঠে দাঁড়ায়।
-মামা চললাম, দোয়া করো....
-শালা হারামির বাচ্চা ! যাইতাছে পকেট মারতে ! কয় দুয়া করো ?
ছেনো রাস্তা পার হয়ে ফেডারেশনের সামনে। বিলাতিরা হাওয়া। পুলিশও হাওয়া। দাঁত ক্যালানো মালগুলো জটলা করে ভেরেন্ডা ভাঁজছে। ছেনো বিসমিল্লা বলে হাত চালিয়ে দিয়েছিল। মালটা যে সাদা পোশাকের পুলিশ ছিল সেটা ছেনোর গু-মুত খেয়ে বেড়ে ওঠা ঘিলুতে জানার কথা না। এর পরের দৃশ্যগুলো সিনেম্যাটিক। এক্সট্রিমলি সিনেম্যাটিক।
-ধর ধর, মার শালারে।
-খানকির পোলা ? রংবাজি দেহানোর জাগা পাওনা?
-মাঙ্গের পুতরে পিষা ফালা।
-কাইল এক চুত্মারানিরে ধরতে পারি নাই. আইজ শালা কই যাইবা?তর পুঙ্গার মইধ্যে যদি বাঁশ না ঢুকাইছি তয় আমার নাম.....পরণেই ভাষণদানকারীর মনে হলো তারে কে চেনে?

চল্লিশ-পঞ্চাশ জন বীর পুরুষ হামলে পড়ল। যারা নেটের ব্যাগে তরিতরকারী নিয়ে হাবদা বোকাচোদার মত ঘরে ফিরছিল তারাও ব্যাগটা একজনকে ধরতে দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। কেরানি,সাহেব,দোকানদার,হকার,বেশ্যার দালাল,স্মার্ট তরুণ,পেটমোটা রমনী,প্রাইভেটের ড্রাইভার,বাসের হেল্পার,এমন কি সেই চা দোকানি মামাও। সচেতন জনতার ক্ষোভ-ক্রোধ-ঘৃণা-জিঘাংসা-মর্দানি-কর্তব্যবোধ-হ্যাডোম উত্থিত হয়ে স্খলন শেষে প্রশমিত হলে দেখা গেল রক্তাক্ত ছেনো ভেঙ্গেচুরে দুমড়েমুচড়ে বিভত্স ভঙ্গিতে শুয়ে আছে। এইফাঁকে দু’তিনটা কিশোর ভয়ে ভয়ে এসে লাথি লাগাল। বীর জনতা তখন লাউডস্পিকার! শ’খানেক লাউডস্পিকার একসাথে দেশ-জাতি-সমাজ-আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ওয়াজ নসিয়তে ব্যাস্ত।

-বান্দিরবাচ্চা মারা গেছে কিনা এইমর্মে সন্দেহ যখন,তখন কে যেন ভালমানুষি ঢঙ্গে বললেন....থামো ! মেরে ফেলবে নাকি? এভাবে আইন হাতে তুলে নেয়া.......

ওই মাঙ্গু, আফনে কেডা? এই হালায় সাগরেদ নি? ভালমানুষ সটকে।
ইত্যবসরে তিন খোঁচর এসে হাজির। ওয়াকি টকি। গাড়ি।পুলিশদের নির্লিপ্ত পান চিবোনো।গাড়ি স্টার্ট। পাবলিক পুন:মূষিকভব:

লকাপে জ্ঞান ফিরল ছেনোর । তখন রাত। সেপাই জানান দিল-
-সার মরে নাই, শালার দি হার্ট অপ কৈ মাছ সার !
-বাঞ্চোৎ ,ভুলভাল এই বালের ইংরেজি না মারালে হয় না?
-ইয়েচ সার,শালার কৈ মাছের প্রাণ সার।
-দেও,তোমার বউয়ের ভাইরে খাবার দেও,মরলে তো আর এক বিপদ। পোস্টমর্টেম-লাশচালান-ফাইল-মাটি কবর কত ফ্যাসাদ।
পুলিশের হোমমেড ম্যান্যুয়ালে কেস মেইনলি তিন ধরণের-তিন ‘ত '। তরমুজ কেস, তাল কেস, তিল কেস। ছেনোর কেসটা ‘তিল কেস ‘। একটা ঘসা পয়সাও মিলবে না। দারোগা হতাশ। টেবিলে পা তুলে ম্যাচের কাঠি কানে ঢুকিয়ে পাক দিয়ে বের করে নাকের কাছে নিয়ে শুকে ছুঁড়ে ফেলল।এদিকে কোন কিছু মনে করার আগে আবারো জ্ঞান হারাল ছেনো।

পরদিন খবরের কাগজঅলারা লিখল:’গণধোলাই’। গতকাল মতি.....জনতা পাকড়াও করে........মারাত্মক আহত......দেশের আইন-শৃংখলা.......জনতা সচেতন হওয়ায়......... এরকম দাগি........এভাবেই.........সমাজ মুক্ত হবে.......শেষ খবর পাওয়া.........

সারাদিন ঘোরের মধ্যে কাটল ছেনোর। সকালেই ওকে হাসপাতালের সেলে নেওয়া হয়েছে। হাত-পা কিছুই নাড়াতে পারছে না। একবার একটুখানি কাত হয়ে জানালা দিয়ে আকাশ দেখেছে। ডাক্তার নার্স সবাই ব্যাস্ত। ছেনো এক কোনায় ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে কেঁপে উঠছে। আবার শান্ত। শুধু মনে হচ্ছে ঘুম ,কতকাল যেন ঘুমায় না।

ছেনো ঘুমাচ্ছে না স্বপ্ন দেখছে নিজেই জানে না। ওর নিজেকে মনে হলো সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া বাছুর। ওলানে মুখ দিয়ে দুধ খাচ্ছে। আবার মনে হলো ওর বয়স পাঁচ। কাগদির পুকুরে ডুবে যাচ্ছে। শির শির করে কানের পাশ দিয়ে পানি কেটে যাচ্ছে। ছোট ছোট ডাকানা মাছগুলো ওর সাথে সাথে নামছে। মাটির ছোঁয়া লাগতেই চমকে তন্দ্রা কেটে গেল! অসহ্য ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠে আবার জ্ঞান হারাল অথবা তন্দ্রাঘুম। এবার দেখল ও ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। আকাশ ছেয়ে গেছে রং বে রংয়ের ঘুড়িতে। কিন্তু সব কেমন যেন আস্তে আস্তে হচ্ছে। ছেনোর ঘুড়িটা চাঁদিয়াল। পেটকাটা চাঁদিয়াল। সবার উপরে উড়ছে। বাঁক খাচ্ছে,গোত্তা মারছে............হঠাৎ একটা ববকা ওর ঘুড়ির পাশে এসে কাট্টি খেলা শুরু করল...ওর সূতোয় তো মান্জা নেই ! যদি কেটে যায় ! একটা প্যাঁচ দিয়েই ববকাটা সূতো ছাড়া শুরু করল.....কাট্টি ! কাট্টি ! কারা যেন চিত্কার করতে লাগল....ছেনোর চাঁদিয়াল আড়াআড়ি দোল খেতে খেতে ভেসে যাচ্ছে......হঠাৎ ওর চারপাশে আলোর বন্যা বয়ে গেল...কারেন্ট ছিল না। এলো। পট পট করে বাতিগুলো জ্বলে উঠল.....একটা বাতি একটু জ্বলে আর জ্বলল না, কিছুক্ষণ লাল হয়ে থেকে দপ করে নিভে গেল...... ব্লাকআউট।


লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): কাট্টি কাট্টিকাট্টি কাট্টি ;
প্রকাশ করা হয়েছে: এন্টি গল্প  বিভাগে । সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১০ রাত ৩:১৫


  • ২০ টি মন্তব্য
  • ৩৩০ বার পঠিত,
Send to your friend Print
পোস্টটি ৭ জনের ভাল লেগেছে
১. ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৪৮
২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৪৯
লেখক বলেছেন: এ অধম ধন্য।
২. ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৫৬
২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:০০
লেখক বলেছেন: আপনি ? এত রাতে ?এখন তো ৩ টার ওপরে ! ভাল আছেন ? দিকে দিন সময় কমে যাচ্ছে। বড় করতে পারছি না। দু তিন দিন পরই তেলেঙ্গানার কবিতা আর মোচড়দেওয়া গানের লিরিক.......................
৩. ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:৩৫
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:০৪
লেখক বলেছেন: হা হা হা ! দারুন বলেছেন ।আপনি নিশ্চই জ্যোতিষী ছিলেন ! অতীত যখন বলেই দিলেন, তখন ভবিষ্যৎটাও বলে দিন না ভাই !!
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:০৫
লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ।
৫. ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৩৪
তারিক টুকু বলেছেন:
বেশ কিছুদিন যাবৎ আপনার গল্প পড়ে যাচ্ছি। ভালই। কিন্তু আমার দু-একটা উত্তর জানা দরকার:

১.এন্টি গল্প জিনিস টা কি? কেনো এটাকে এন্টি গল্প বলতে চাচ্ছেন?

২.গল্পে কী কী না থাকলে সেটাকে আমরা এন্টি গল্প বলে ধরতে পারি না ?

জানাবেন আশাকরি।
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১:১২
লেখক বলেছেন: আমার তো ভাই সব উত্তর জানাও নেই।তবুও জানাতে তো হবেই।

১।এন্টি গল্প আসলে কিছুই না।প্রচলিত গল্প যে ফর্ম,কন্টেন্ট,পরিনতি,কথকতা,ক্যানভাস বা ন্যারেশন ধরে এগোয় ঠিক সেই মতন এগোয় না এন্টি গল্প।কিছুটা হলেও আলাদা।

২।কী কী থাকলে নয়, বরং বলা যেতে পারে কী কী না থাকলে..........
যেমন চিরায়ত প্রেমট্রেমের ব্যাপারগুলো এখানে আসে না। আসলেও খুব অল্প স্পেসে। ছোট গল্প যেমন "শেষ হইয়াও হইল না শেষ", এন্টি গল্প তা নয়। এর শেষ আছে।

৩। আর কথাবার্তাগুলো কিছুটা এলোমেলো। ঠিক সুশীলীয় নয়।

পড়বার এবং জানবার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ।
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১:১৩
লেখক বলেছেন: বেশ বেশ।ধন্যবাদ।
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১:১৭
লেখক বলেছেন: কাইল রাইতে হুট কইরা ডুব দিলেন ! পরে আর খুইজ্জ্যা পাইনা !
লীলেন ভাই, ৩ নম্বর মন্তব্যডা দেইখেন ! হা হা হা !

"ভাই আপনি কি কখনো পকেটমার ছিলেন" ???
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:১৪
লেখক বলেছেন: :)
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৫০
লেখক বলেছেন: ওকে!
১০. ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৩০
শফিউল আলম ইমন বলেছেন: আমি এটা না পড়ে পরেরটা পড়ে ফেলছি। তবে, একটা জিনিস ভালো লাগছে সেটা হলো কেউ এটা না পড়ে পরেরটা পড়লেও কিছু একটা মিস হয়ে গেছে সেটা বুঝতে পারবে না। ভালো লাগছে।
আগে ও বলেছি, আপনি অনেক সুন্দর করে লিখতে পারেন।
ভালো থাকুন।
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৫৪
লেখক বলেছেন: আসলে এটার সাথে 'ঘনা কাহিনীর' খুব একটা মিল নেই।ঘনাকে এই সিরিজের হিরো ধরলে এটা থেকে ঘনা স্রেফ ওভারল্যাপ করেছে।আপনার দিনগুলি সুন্দর কাটুক।

কোন মন্তব্য নেই: