১২ ফেব, ২০১১

এন্টি গল্প>কত চেনা মুখ অচেনা মুখ পলকে মিলিয়ে যায়> ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:০০


উঁচু ছাত থেকে একটা ন্যাংটো বাল্ব ঝুলছে, ঘোলাটে আলো,সেই আবছা আলোয় সোজা উল্টো দিকের দেওয়ালে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে লোকটি, চটা ওঠা এবড়ো থেবড়ো দেওয়াল,পলকহীন চেয়ে থাকতে থাকতে এক সময় ঝাপসা হয়ে আসে দেওয়ালটা, চটা ওঠা দেওয়ালে ভেসে ওঠে কত চেনা মুখ,অচেনা মুখ.....পলকে মিলিয়ে যায়,

সেই শৈশবের কথা,ছোট্ট নদীটা পেরুতে পারত না,গরুর ল্যাজ ধরে থাকত,গরুই ওপারে নিয়ে যেত, ভিজে কাপড়ে ওপারে গিয়ে গুরুবরণের কলাবাগানে হামলে পড়া,দুবিঘে জোড়া বাগানে খুঁজে পেতে এককাঁধি পাকা কলা জুটেই যেত,বেড়ার ধারে সেই বিলাতী কচা পাছ,পাতাটা মাঝবরাবর ভাংলে কষ,তারপর আস্তে করে দুপাশ চাপ দিয়ে উঁচু করলে কাঁচের মত ছবি দেখা যেত,শেষ হওয়া ঝোলাগুড়ের মালসা,লবন আর একটা দেশলাই নিয়ে মটরশুটি ক্ষেতে,মটরশুটি তুলে তিনটে বড় চাংড়া দিয়ে চুলো বানিয়ে সেদ্দ করা,তারপর এক পাশে ধরে অন্য পাশ মুখে পুরে ছোট্ট একটা টান,জলে ডুব দিয়ে শালুক তুলে ঘরে ফেরা,কি ভাবে শালুক খায় জানা নেই,বড় পথটা যেখানে শেষ হয়ে মেঠো পথে নেমে গেছে সেখানে ছিল বইচি ফলের ঝাঁকড়া গাছ,পাকা পর্যন্ত অপেক্ষা নেই কারো,নৌকার গলুইধরে বসে থাকা আর দোলদুলুনি,কেটে আনা কচুরিপানার গন্ধ,পাটপঁচা গন্ধ,ছোট ছোট চিংড়ি গামছায় তুলে আবার ছেড়ে দেয়া,বোশেখে কাল মেঘ করে এলে টিনের ঘরে বাঁশের সেই পেলা দেয়া,ঝম ঝম শব্দে টিনের চালা উড়ে যাওয়া,আর সব কলাগাছের পাতাগুলো ফারি ফালি হয়ে চিরে যাওয়া,খুব ভোরে উঠে বকুল কুড়োতে গেলে চক্রোবর্তীদের দারোয়ান তাড়া করত,তবুও বকুল পড়ত না হাত থেকে,আরো পরে সায়েবদের বাড়িতে বাগানবিলাস ছেয়ে থাকত,তুলে এনে শিউলী কে দিতেই ওর বাপের চোখে পড়া,বাড়িতে খবর,এবং বাগানবিলাসের তলে যাওয়া বারণ,ভাদ্রমাসে আমনের ভরা ধানের ক্ষেতে গোলমত ফুট কেটে কৈয়েবড়শি ফেলে পুঁটি মাছ ধরা,রূপোলী পুঁটি নৌকার কালো গলুইয়ে চকচক করে বাউলি কাটত,বেলা ডোবার মুহূর্তে বাড়ি ফিরে.......রাতে বড় তালগাছটি থেকে ধপাস করে তাল পড়ত, কখন ধপাস করবে সে আশায় কান খাড়া করে অপেক্ষা করা,কোন কোন দিন সারা রাত কেটে গেলেও তাল পড়ত না,যেদিন শিউলীকে প্রথম চুমু খেতে যাওয়া,চুমু তো পরে, আগে বুকের ধুকপুক সামলাতে সামলাতে এক সময় কোথায় হারিয়ে যেত শিউলী,অনেকটা দূরের মানুষ যখন কাছে আসত তখন রাজ্যের ভাললাগা দিয়ে কাছে রাখা,আপন করা,শেষে কিছুই হয়ে উঠত
না, মা,হ্যাঁ,মা,মাকে যখন মনে পড়ে তখন আর মাকে মনে করার দায় থাকে না,কেননা মা মনে পড়ার দায় থেকে এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যেয় নিষ্কিতি দিয়ে গেছে,মায়ের মুখ আর মনে পড়ে না,এরকম কত চেনা মুখ,অচেনা মুখ ভেসে ওঠে,পলকে মিলিয়ে যায়.............................

একটানে এতসব স্মৃতির জমিন ঘুরে এসে স্মৃতির কলকব্জাগুলোও কান্ত.....অথচ এই স্মৃতির ক্যানভাসটা আর একবার ঘুরে দেখে আসার সময় নেই.....স্মৃতির চোখ শেষে এসে থেমে যায় হাতকড়া আর ডান্ডাবেড়িতে,এত বড় ফেলে আসা স্মৃতি মনে করার জন্য অত সময়ও নেই,কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা এসে যাবে,তারপর ফাঁসিকাঠের সেই ঠান্ডা নিথর সময়টুকু....আহ্ আর একবার যদি দেখে আসতে পারতাম.....শুধু একবার....ঠিক তখনই ঘটাং করে সেলের তালা খুলে যায়........

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): ফাঁসির আসামির স্মৃতিফাঁসির আসামির স্মৃতি ;
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১০ রাত ১২:৫২


  • ১২ টি মন্তব্য
  • ১৮৮ বার পঠিত,
Send to your friend Print
পোস্টটি ৪ জনের ভাল লেগেছে
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:২৮
লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ। তিন ঘন্টা কারেন্ট ছিল না। পোস্ট করেই হাবদার মত বসে ছিলাম.......
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:৩০
লেখক বলেছেন: নারে ভাই এইডা ব্রান্ড নিউ প্যাকেজ। আগে পরেন নাই। হেই পিন্নেই অচেনা ঠ্যাহে...।ভালা । আফনে ভালানি ?কত্ত দিন ফর নি কতা...
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:৩১
লেখক বলেছেন: হুমম !
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:৩১
লেখক বলেছেন: বেশ। এতেই কাফি !
৫. ০৯ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ২:১০
হিমালয়৭৭৭ বলেছেন: লেখাটাকে একটা তৈলচিত্রের সাথে মেলাতে ইচ।চা হচ্ছে...তবে চিত্রটায সবকিছু থাকলেও মনে হল ঠাসাঠাসি করতে গিয়ে চিত্রের বেশকিছু ভাব উহ্য বা অসম্পূর্ণ রয়ে গেল...তবে তৈলচিত্রএর এটাই সবচেয়ে বড় সুবিধা যে, এর ভাবার্থ দর্শনার্থী ভেদে সবসময়ই ভিন্ন হয়..........
০৯ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ২:২১
লেখক বলেছেন:
অসাধারণ মন্তব্য। আমার লেখা যেন বছর পেরিয়ে সার্থক হলো....। গল্পটায় আরো একটু ফাইনাল টাচ্ বাকি ছিল। দেওয়ার ইচ্ছেও ছিল পরে আর হয়ে ওঠেনি।

শুভেচ্ছা নিন।
০৯ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ২:৩২
লেখক বলেছেন: ভাল আছি, আপনি ?

কোন মন্তব্য নেই: