১৭ ফেব, ২০১১

বিশ্বে ৯০ কোটি মানুষ অনাহার-অর্ধাহারে মৃত্যুর দিন গুনছে



২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১২:২৭

বিবিসি নামটা শুনলেই আমাদের একধরণের ভক্তি-শ্রদ্ধা জেগে ওঠে।মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্ক টালির নিরলস নিঃস্বার্থ সেবার কথা মনে পড়ে যায়।স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় সাধারণ মানুষ এই বিবিসিকে ই একমাত্র বিশ্বসযোগ্য ভাবত।অথচ এই বিবিসি কে খোদ ব্রিটেনের প্রগতিশীল নাগরিকেরা তেমন আমলে নেন না।পূর্ব ইউরোপ আর দূর প্রাচ্যে বিবিসি কে ব্যঙ্গ করে বলা হয় "ব্রিটিশ ব্লান্ডার সার্ভিস"। এদের আর একটা চ্যানেল আছে, যার নাম "চ্যানেল ফোর"। এদের কাজ হচ্ছে পুঁজিবাদী দুনিয়ার বাইরে যত বাম নেতা,গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা আছেন তাঁদের চরিত্র হরণ করা।"লাস্ট টেন ডেজ অব লেনিন", "মাও সে তুং দ্য রেড ডেভিল", "আননোন হিস্ট্রি অব জার নিকোলাস টু"......কয়েকটি নমূনা মাত্র।

এত কথা এজন্য বলা যে,বিশ্বে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে সারা বিশ্বে তার কি প্রভাব পড়েছে সেটা নিয়ে এরা একটা জরিপ হাজির করেছে!
এবং বিস্ময়কর ভাবে সেই জরিপে বাংলাদেশ,নেপাল,ভুটান, ইথিওপিয়া,আফগানিস্তান,রুয়ান্ডা, সিয়েরে লিয়ন,পূর্ব আফ্রিকার মত দেশের নাম নেই! যে দেশগুলির 'দুর্দশার' কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে একমাত্র কেনিয়া সত্যিকার অর্থে দুর্গতিতে পড়েছে।আর বাকি সব গুলো দেশই উন্নত বিশ্বের অধীনে।এখানে তারা সুকৌশলে একটা রাজনীতি করে গেছে।

বাংলাদেশের মত যে দেশ গুলিতে তাদের তাবেদার সরকার ক্ষমতায় আছে বা আগামীতে আসবে সেই দেশ গুলির কোন দুর্দশা বা অভাব-অনটনের ছবি এদের নজরে আসেনি! অর্থাৎ তাদের পরিসংখ্যান বা জরিপ মতে যে দেশ গুলির কথা বলা হলো তারা বেশ "নিরাপদে সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে" !! এই ধান্ধাবাজীর মূলে আছে নয়া তেল আর গ্লোবাল বাণিজ্য। আমরা আপাতত সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না।

আমাদের দেশে জ্বালানি তেল আর খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে কি ভয়ংকর দশা হয়েছে সেটা আমাদের শাসকরাই যেখানে স্বীকার করেন না, সেখানে ওরা করবে কেন? শুধু যদি জ্বালানি তেল আর খাদ্য দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সমস্যা হতো তাও বিশ্ব পরিস্থিতি বলে না হয় মেনে নেওয়া যেত। আমাদের দেশে তো ঘটেছে অন্য কিছু।ওয়ান ইলেভেনের পর অব্যবস্থা,ভিন্ন রঙের চুরি-চামারি,অযোগ্যতা এবং উদ্ভট তুঘলকীয় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে।দ্রব্যমূল্য আকাশ ছোঁয়া।

আমাদের সংবাদপত্রের সাদা পাতায় অনাহারে মৃতের ছবি চাকচিক্য বাড়ায় না বলে হয়ত তারা ছাপেন না। আবার 'অঘোষিত' নিষেধাজ্ঞার কারণেও ছাপা যায় না।প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জের বিচ্ছিন্ন ভাবে পাওয়া সূত্র মতে গত দুই বছরে কম করে হলেও শ'দেড়েক মানুষ অনাহারে মারা গেছে।এখনো কুড়িগ্রামের রিমোট এলাকা গুলোতে মানুষ অনাহারে মরছে।
ঢাকা শহরে ফুটপাথে প্রকাশ্যে চিৎপটাং হয়ে মরেনি বলে কি তারা মরছে না ? বিদেশী সাহায্য সংস্থা গুলোর আলীশান দপ্তরের সামনে তড়পে তড়পে মরেনি বলে কি তারা মরছে না?এই দেশের মানুষ অভাব আক্রান্ত হয়ে জীবন জীবীকার মান কোথায় নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে সেটা যদি একবার এই তথ্যবিলাসী নাপিতেরা জানতেন তাহলে তাদের ওই সব ভেরেন্ডাভাজা জরিপ শিকেয় তুলে রাখতে হতো।

যা হোক তাদের জরিপ এবং 'তথ্যবোমা' র প্রতিবেদনটা হুবহু তুলে দেওয়া হলো।
----------------------------------------------------------------------------------
খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য বাড়ার কারণে বিভিন্নদেশের ৯০ কোটির মতো মানুষ অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। ধনী দেশগুলোতেও দুর্ভোগ বেড়েছে। অনেকেই আগের তুলনায় কম খাচ্ছে। ২৬ টি দেশে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস পরিচালিত জরিপে একথা জানা গেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী এসব দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ বলেছে, মূল্যবৃদ্ধির কারণে তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এদিকে সাহায্য সংস্থা অক্সফাম বলেছে, মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ বছর নতুন করে ১১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। তাদের খাদ্য সংগ্রহ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। ৮ জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টম্বর পর্যন্ত ২৬টি দেশে বিবিসির জরিপে সহযোগিতা করে গ্লোব স্ক্যান। বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়, এই দেশগুলোর মধ্যে ফিলিপাইনের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। সে দেশের ৬৩ শতাংশ মানুষ খাদ্যগ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। এর পরেই আছে কেনিয়া। সেদেশের ৬১ শতাংশ মানুষ কম খাচ্ছে। ২৬টি দেশের ৪৩ শতাংশ মানুষ খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে। পানামার ৭১ শতাংশ এবং মিসরের ৬৭ শতাংশ মানুষ খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেছে।
খাদ্য ও জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য বিভিন্ন দেশ ইতিমধ্যেই সংকট মোচন তহবিল বরাদ্দ করেছে। গ্লোব স্ক্যানের চেয়ারম্যান ডুগ মিলার বলেন, খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির চড়া দামের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের একটা বড় অংশ দারুণ আর্থিক সংকটে পড়েছে। ২৬টি দেশের ৯০ কোটি মানুষ না খেয়ে থাকার পরিস্থিতিতে। তার মতে, খাদ্য এবং জ্বালানির উচ্চমূল্যেরর সঙ্গে অব্যাহত মুদ্রাস্ফিতি যুক্ত হয়ে দরিদ্র এবং কম আয়ের মানুষকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে পরিণত করেছে। এরা শুধু বাজারে বাহারি পণ্যের সরবরাহ দেখে আফসোস করছেন, কিন্তু কিনতে পারছেন না।
এছাড়া ধনী দেশ অস্ট্রেলিয়ার ২৭, ব্রিটেনের ২৫ এবং জার্মানির ১০ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে তারা খাদ্য গ্রহণ কমিয়েছেন। কমিয়েছেন জ্বালানি তেলের ব্যবহার। ফিলিপাইনের ৯৬, মিসরের ৯৩, ইন্দোনেশিয়ার ৮৪, কেনিয়ার ৮৩ এবং মেক্সিকোর ৮১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধি তাদের জীবনে আর্থিক সংকট বাড়িয়েছে। অনুরূপ মতামত ব্যক্ত করেছেন ইতালির ৬১, ফ্রান্সের ৫৯ এবং যুক্তরাষ্টের ৫৮ শতাংশ উত্তরদাতা। এই উত্তরদাতাদের গড়ে ৭০ শতাংশ মনে করেন, তাদের আর্থিক সংকট লাঘবে সরকার তেমন কিছুই করছে না। বিবিসির জরিপে অষ্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, কোস্টারিকা, মিসর, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, কেনিয়া, লেবানন, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, পানামা, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের ২৭ হাজার ৩১৯ জন প্রাপ্তবয়ষ্ক লোক অংশ নেন।
----------------------------------------------------------------------------------

পুনশ্চঃ আমার নিজের কাছেই সোহাগীবালা দেবী,সবিতা রানী, মইছুদ্দিন, হাতেম আলীর মুত্যু খবর বা তথ্য রয়েছে।তারা অনাহারেই মারা গেছেন। সিডরের পর উপকূল অঞ্চলে শত শত মানুষ ঝড়ে শুধু নয়, না খেতে পেয়ে মরেছে।এখনো মরছে। ওই যে বললাম ; সংবাদপত্র এখন রূপ রস গন্ধ আর কৌমার্য বিতরণে ব্যাস্ত।কর্পোরেট বেশ্যাদের সাথে আরোপিত ছেনালগিরিতে ব্যাপ্ত।


লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): অনাহারঅর্ধাহার ;
প্রকাশ করা হয়েছে: প্রবন্ধসমসাময়ীক রাজনীতি  বিভাগে । সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১০ রাত ৩:৩৯


  • ১৭ টি মন্তব্য
  • ৩৯৮ বার পঠিত,
Send to your friend Print
পোস্টটি ১৩ জনের ভাল লেগেছে
১. ২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১২:৩০
রাতমজুর বলেছেন:
মিডিয়া = পুঁজিবাদ আর ক্ষমতাবানের প্রোপাগন্ডা

আর কিছু বলার নেই আমার, কারন আমিও উল্টোপথেরই একজন, ভীড়ের একজন :(
২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১:০৪
লেখক বলেছেন: ও ভাই শুনছেন.....কেউ কি শুনছেন......
২. ২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১২:৪৭
শয়তান বলেছেন:
আজকে দেখলাম সিডরের সাহায্যের বাড়ীঘর আইসা মাত্র পৌছাইছে ।

হাসতে হাসতে শেষ ।
২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১:০৬
লেখক বলেছেন: এই বার ইংরেজি করেন.........সাহায্য আসিবার পূর্বেই আক্রান্তরা মরিয়া গেল..........................
২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১:৪৭
লেখক বলেছেন: হুমম
৪. ২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১:২২
মনজুরুল হক বলেছেন: সোহাগী বালা মারা গেছিল ২০০৪ সালে। তার অনাহারে মৃত্যুর খবর নিয়ে কাগজে আমার লেখার পর মানহানীর মামলাও খেতে হয়েছিল।ওই লেখাটা ছাপা হবার পর সেই কুড়িগ্রামে গিয়ে সরজমিনে দেখে এসেছিলাম। অবিশ্বাস্য মানুষের কষ্ট! লেখাটা এখানে দেই না অসন্মানের ভয়ে। ওই মৃত্যু নিয়ে কেউ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলে ভাল লাগবে না।কষ্ট পাব।
২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১:৩৫
লেখক বলেছেন: না না, আমরা সেই ধনীর দুলালির মত বলতে পারব...............ভাত নেই ? সো হোয়াট ? পিজ্জা খেতে পারো !
২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ২:৩৯
লেখক বলেছেন: সাথে নির্লজ্জ ছ্যাবলামো।

ধন্যবাদ ফারহান।
৭. ২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:৪৭
নুশেরা বলেছেন: অনাহারে মরে গেলেও বোধহয় একরকম ভাল। বেঁচে যারা থাকে তাদের অপুষ্টির মাত্রা মাপা পুষ্টিবিদের স্কেলেরও অসাধ্য। গৃহকর্মী বা পথেঘাটে দোকান-বাজারে কাজ করা ছেলেমেয়েদের দেখবেন, স্বাভাবিক রিফ্লেক্স বা একটু চিন্তা করার ক্ষমতা কত কমে এসেছে (যে কোন কারণে হোক, আমি খেয়াল করি)। শারীরিক গঠনের কথা বাদই দিলাম।
অনেক কষ্ট দেয় এমন বিষয়, এমন লেখা। অক্ষমতার কষ্ট, সীমাবদ্ধতার কষ্ট...
২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১০:৫৬
লেখক বলেছেন: অপুষ্টি নিয়ে চিন্তা হতো সুখের কালে। এখন অশনি কাল।এখন প্রধান চিন্তা বেঁচে থাকার।

উপলব্ধির জন্য সাধুবাদ নুশেরা।
২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১০:৫৩
লেখক বলেছেন: থ্যাঙ্কস
৯. ২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৫:০০
মানবী বলেছেন: এদের লিস্টে বাংলাদেশের নাম নেই, তার কারন খুব সম্ভবত- যে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ আজন্ম দ্রব্যমূল্যের কারনে খাদ্য গ্রহন কমিয়ে রাখেন, সেই শতাংশটা আর হয়তো কিছু বৃদ্ধি পেতো!!! কথাগুলো লেখার সময় খুব মন খারাপ হলো!! তিতকুটে হলেও সত্য তো.... তারপর ও আমাদের কোন বিকার নেই। সরকার বা সাধারন মানুষ, আমরা কেউ এতো বছরেও কোন কার্যকরুদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে পারিনি। নিজ নিজ স্বার্থ নিয়ে আমরা সবাই ব্যস্ত।



"প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জের বিচ্ছিন্ন ভাবে পাওয়া সূত্র মতে গত দুই বছরে কম করে হলেও শ'দেড়েক মানুষ অনাহারে মারা গেছে।এখনো কুড়িগ্রামের রিমোট এলাকা গুলোতে মানুষ অনাহারে মরছে।
ঢাকা শহরে ফুটপাথে প্রকাশ্যে চিৎপটাং হয়ে মরেনি বলে কি তারা মরছে না ? বিদেশী সাহায্য সংস্থা গুলোর আলীশান দপ্তরের সামনে তড়পে তড়পে মরেনি বলে কি তারা মরছে না?"

- আমাদের সংবাদপত্র সহ অন্যান্য গণমাধ্যমগুলো এধরনের সংবাদ কেন এড়িয়ে যায়, তা বোধগম্য হয়না। গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে সরকার কিছু না করলেও, অনেক সাধারন মানুষ সাধ্যমতো তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করেন।
অভাবগ্রস্থ অনাহারী মানুষদের প্রতি রাষ্ট্র ও মিডিয়ার এমন উদাসীনতা খুব দুঃখজনক!!


পোস্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ মনজুরুল হক।
১০. ২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১০:৫৮
মনজুরুল হক বলেছেন: আমাদের শাসক,মিডিয়া,শাসকদের অনুগামী,মিডিয়ার বেনিফিশিয়ারি সকলেই নির্লজ্জ।

আত্মবিশ্লেষণ মূলক মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ মানবী।

কোন মন্তব্য নেই: