১২ ফেব, ২০১১

তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ। সোনার পাথর বাটি ! ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:৩৪


“তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ ২০০৮ চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করেছে সরকার। এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জীবন-মৃত্যু, গ্রেফতার, কারামুক্তি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রাথমিক তথ্য সরবরাহ করবেন।
গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদের সব সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীরা, কেবিনেট সচিব আলী ইমাম মজুমদার, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সৈয়দ ফাহিম মুনয়েমসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, কেউ তথ্য চেয়ে না পেলে এ অধ্যাদেশে সংশ্লিষ্ট
কর্মকর্তার প্রতিদিন ৫০ টাকা হারে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। গত ১৮ জুন উপদেষ্টা পরিষদে তথ্য
অধিকার অধ্যাদেশ নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এ অধ্যাদেশের কতিপয় ধারা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ ওঠে। এসব ধারা যাচাই-বাছাই এবং আরো পর্যালোচনা করতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পর্যালোচনা শেষে গতকাল অধ্যাদেশটি উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হলে তা চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।”(সমকাল,২১ সেপ্টম্বর,২০০৮)

এ দিন প্রায় সব ক’টি জাতীয় দৈনিকে এই খবরটা ছাপা হয়েছে।খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছে,তাও নয়। আবার বিস্তারিত বলা হয়েছে তাও নয়। সরকার বিষয়টি যেভাবে ট্রিটমেন্ট দিয়েছে সংবাদপত্র গুলিও মোটামুটি সেভাবেই ট্রিটমেন্ট করেছে। এক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে সংবাদপত্র সমূহের মিল লণীয়! এই যে ‘তথ্য অধিকার আইন’ যেটা পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে ‘আর টি আই’ বা (রাইট টু ইনফরমেশন) হিসেবে পরিচিত।ভারতীয় রাজনীতিতে তো বটেই,জনসাধারণের ভেতরও এরকম একটা ধারণা গড়ে উঠেছে যে, এই ‘আর টি আই’ আইন করা, সেই আইন বলবৎ করা,জনগনকে আই আইনের সুফল সম্পর্কে অবহিত করা,এই আইন বিষয়ে সরকারের কর্মকর্তাদের সজাগ করা, এই সকল বিষয় ব্যক্তিগত ভাবে মনিটরিং করেছেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগেই মনে করা হয় সার্কভূক্ত দেশগুলো থেকে গণমাধ্যমের সদস্যদের ভারতে আমন্ত্রণ করে নিয়ে হাতে-কলমে পুরো বিষয়টা দেখানো হয়েছিল।যারা এই কর্মশালায় গেছিলেন তাদের মধ্যে পরিচিত এবং বন্ধুস্থানীয়রা ফিরে এসে যা বলেছেন সেটা শুনে মনে হয়েছে.....কবে আমাদের দেশে এমন ব্যবস্থা চালু হবে ? কবে আমাদের দেশের মানুষ তাদের ট্যাক্সের পয়সায় বেতনভূক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে জবাবদিহিতা পাওয়ার অধিকার অর্জন করবে ? সেই থেকেই আমরা অপেক্ষায় ছিলাম।অবশেষে সেই ‘মহার্ঘ’ আইন পাশ হলো ! কী পাশ হলো ? কী ভাবে পাশ হলো ? সে কথায় পরে আসছি।

এই আইনটি পাশ হওয়ার আগে যে খসড়া হয়েছিল সেটা নিয়ে আমাদের গণমাধ্যমে তোলপাড় না হলেও সম্পাদকরা সেই খসড়া দেখে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।ওই আইনকে তারা তথ্য অধিকারের বদলে ‘তথ্য হরণ’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।এর পর ‘নিউ এজ’ এর এডিটর নূরুল কবির টেলিভিশন চ্যানেলে এক আলোচনায় এই খসড়া আইনের নানান দিক তুলে ধরেছিলেন।তিনি বেশ কয়েকটি ধারা উল্লেখ করে দেখিয়েছিলেন সরকার ‘তথ্য অধিকার’ দিতে চেয়ে আসলে প্রচলিত যে সামান্য অধিকারগুলো আছে সেগুলোও হরণ করতে চাইছে! এর পর আর সেই আলোচনা এগোয়নি। এ নিয়ে আর কাউকে উচ্চবাচ্য হতে দেখা যায়নি।যেহেতু সরকারের খসড়া কিছুটা ঘসামাজা করা হয়েছে সেহেতু এটা এখন যেন জনগণের রক্ষাকবজ হয়ে গেছে, অন্তত সরকারের আইন পাশের পরের ঘোষণা সেরকমই ইঙ্গিত দেয়। এবার দেখা যাক আসল ‘তথ্য অধিকার’ আইনে মোটাদাগে জনগণের জন্য কী আছে, আর আমাদের মহামহিম সরকার জনগণকে ‘কুমিরের এক ছানা সাত বার না সত্তর বার দেখায় সেটা দেখা যাক’।

তথ্য অধিকার বলতে সাধারণত আমরা বুঝি-(১)দেশের সামগ্রিক তথ্য জনগণের জানবার অধিকার। (২)বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা, এবং সেই সামরিক স্থাপনা কোন দেশ বা কাদের দিকে তাক করা, এইটি ছাড়া সরকারের সকল বিষয়াদি জনগণের জানবার অধিকার।(৩)সরকার দেশের স্বার্থে কোন ধরণের চুক্তি করতে যাচ্ছে সেটা জানবার অধিকার।(৪) সরকারের অভ্যন্তরীণ নীতি বা পলিসি কি হচ্ছে বা কি কি বদলাচ্ছে সেটা জানবার অধিকার।(৫) সরকার জনগণের কাছ থেকে কত টাকা কর আদায় করে কত টাকা জনকল্যাণে ব্যয় করছে সেটা জানবার অধিকার।(৬)বিভিন্ন দেশের সাথে সরকার যে সকল দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করছে, সেই চুক্তিতে দেশের কি স্বার্থ অর্জিত হবে বা কি স্বার্থ লঙ্ঘিত হবে সেটা জানবার অধিকার।(৭)দেশের সংবাপত্র সমূহকে সরকার কেন সকল তথ্য সরবরাহ করবে না সেটা জাবার অধিকার।(৮)‘ষ্টেট সিক্রেসি’ ‘রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা’ কতটুকু সংবাদ পত্রে এলো আর কতটুকু এলো না সেটা জানবার অধিকার।(৯)সরকার তার মন্ত্রীপরিষদ চালাতে রাষ্ট্রের কত টাকা ব্যয় করছে সেটা জানবার অধিকার।(১০)সরকারের বিভিন্ন বাহিনী গঠনে,উন্নয়ন করণে,তাদের দিয়ে সরকার কোন জননিপীড়ন করছে কী-না কিংবা সেই বাহিনী পুষতে গিয়ে সরকার জনউন্নয়ন বাজেট কাটছাট করছে কী না সেটা জানবার অধিকার। এরকম মোট ১৮টি জন অধিকার নিশ্চিত করার অধিকার হলো ‘তথ্য অধিকার’ বা রাইট টু ইনফরমেশন।

যদিও সরকারের পাশ করা এই অধিকার জনগণের ঠিক কি কি অধিকার নিশ্চিত করেছে বা করবে সেটা খবরের কোথাও আসেনি।তবে যে খসড়া দেখে সম্পাদকরা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তাতে অধিকার দূরের কথা, যে প্রচলিত যেনতেন অধিকার এমনিতেই জনগণ ভোগ করত সেগুলোও বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। এখন আমরা শুধু জানলাম, একটা আইন পাশ হয়েছে, এবং এই আইনের প্রয়োগ করবে কারা বা কি ভাবে করবে তা। একটা কমিশন গঠন হবে, এবং সেই কমিশনে কারা কারা থাকবেন সেটা।কিন্তু জনগণকে আসলে কি অধিকার দেওয়া হলো সেটা উহ্যই রয়ে গেল!

মডার্ণ ষ্টেট পলিসি বলতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় এখন আর গোপনীয়তা বলে কোন টার্ম নেই, কারণ ইন্টারনেট,ওয়েব এর যুগে রাষ্ট্রীয় সিক্রেসি বলে আসলেই কিছু আর নেই।সে কারণেই যক্তরাষ্ট্রের অনেক গোপন দলিল এখন জনসমক্ষে চলে আসছে। তারা একসময় যে ফিদেল ক্যাষ্ট্রোকে খুন করতে চেয়েছিল সেটাও গণমাধ্যমে চলে আসছে।অথচ এখনো আমাদের দেশে সংবাদ মাধ্যমকে রাষ্ট্র যেটুকু সংবাদ জানাবে তার বাইরে এক রত্তিও খবর ফাঁস করার অধিকার সংবাদ পত্রের নেই।জনগণের জানবার অধিকার তো অনেক পরের বিষয়! যে বিষয় গুলি আলোচনা করা হলো তার একটিও কি সরকার জনগণকে জানাতে চায় ? জনগণ জানতে পারে ? জানবার অধিকার আছে ? নেই। তাহলে এই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যে অধ্যাদেশ বানানো হলো সেটা কী ?আমরা যখন জানতেই পারছি না যে কি কি জানবার অধিকার আছে আমাদের ?তাহলে সেটা না দেওয়ায় কার কত টাকা জরিমানা হলো তা দিয়ে জনগণের কি লাভ? জনগণ এখন যেমন চোখে ঠুঁলি পরে আছে(পরিয়ে দেওয়া হয়েছে) আগামীতেও তাই থাকবে।শুধু শুধু নতুন ধরণের ধোকা কেন? অধিকার তো এ দেশের মানুষের এমনিতেই নেই। যা আছে তাকে সোনার রেকাবিতে করে পরিবেশনে আর যাই হোক কোন জবাবদিহিতা নেই।

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): আর টি আই।আর টি আই। ;
প্রকাশ করা হয়েছে: সমসাময়ীক রাজনীতি  বিভাগে । সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১০ রাত ৩:১৬


  • ১৫ টি মন্তব্য
  • ৩২৪ বার পঠিত,
Send to your friend Print
পোস্টটি ৬ জনের ভাল লেগেছে
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:৩২
লেখক বলেছেন: বিসমিল্লাহ !
২. ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:৩৫
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:৪১
লেখক বলেছেন: আমিও তাই মিন করছি। বিসমিল্লাহ কইছি আপনি প্রথম মন্তব্যকারী তাই! এ ধরণের লেখায় সাধারণত পাব্লিক সাইড কেটে সরে যায় .........

লেখাটা কমপ্লিট হবে সরকারের লিষ্টিটা পেলে।
৩. ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:৫৪
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:৫৯
লেখক বলেছেন: এই এক যন্ত্রনা।টেকি ব্যাপার-স্যাপার কম বুঝি ! ভয়ে ড্রাফটও করি না!
আসলে আমাকে কিছু দিন আপনার কাছে একনিষ্ঠ ছাত্র হয়ে শিক্ষা নিতে হবে।

অ.ট: বসতে চাইছিলেন ? দিন ঠিক হলো ? জানাবেন ।
৪. ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:৫৮
নুশেরা বলেছেন: সময়োপযোগী লেখা। আমার কৌতুহল- "সংশ্লিষ্ট" কর্মকর্তাটি সুনির্দিষ্টভাবে কে হবেন? তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি তবে সকল দপ্তরে থাকবেন? (তার তো জলে কুমীর ডাঙায় বাঘ দশা হবে।) নইলে অ্যালিবাই-এর অভাব হবেনা কারও।
আর আমরা তো সেই পুরনো বুলি জানিই- তদন্তের স্বার্থে এর বেশী জানানো হচ্ছেনা ;)
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:৩০
লেখক বলেছেন: সেই একজন অতিশয় সজ্জন(!) বিচারপতি ! যারা সামান্য পরিমানে টেকনোলজিক্যাল জ্ঞান ছাড়াই পারমানবিক রিআ্যাক্টর ফল্টের তথ্য উদ্ঘাটনে নামে ! বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের সকলেই যদি গ্রাজুয়েটও হয়ে যায়, তবুও এনারা আমাদের আবাল-ই ভাবতে ভালবাসেন !!
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:৩২
লেখক বলেছেন: রঙ্গ ভরা এই দেশেতে দেখার তো আর কিছুই নেই!
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:৩৫
লেখক বলেছেন: সবাই বলে অমুক অমুক ওই পোস্ট অলংকৃত করেছেন । আমার মত ....তারা আসলে রি-হ্যাবিলেটেড হয়েছেন।জাতি আমাদের কে রামছাগল বলার জন্য তাদের রি-হ্যাবিলেটেড করে ধন্য হয়েছে !
৭. ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সকাল ৭:৩৭
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৫১
লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাল লাগায়।
৮. ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৫০ মনজুরুল হক বলেছেন: @আন্ধার রাত।
"সবাই বলে অমুক অমুক ওই পোস্ট অলংকৃত করেছেন । আমার মত ....তারা আসলে রি-হ্যাবিলেটেড হয়েছেন।জাতি আমাদের কে রামছাগল বলার জন্য তাদের রি-হ্যাবিলেটেড করে ধন্য হয়েছে !"

এই কথাগুলো বলেছি আমাদের আমলা-কর্তাদের উদ্দেশ্য।ভুল বোঝা এড়াতে রি-কমেন্ট।

কোন মন্তব্য নেই: