৩০ এপ্রি, ২০১১

সারা বিশ্বের কত কি বদলে গেল! বদলালো না শ্রমিকের হাতের সেই সনাতনী কাস্তে-হাতুড়ি আর জন্ম জন্মান্তরের শ্রম শোষণ!


বছর ঘুরে আবারো খেটে খাওয়া মানুষের স্বপ্ন সার্থকতার দিন মহান মে দিবস এসেছে। তবে আর দশ-পাঁচটা দিবসের মত আপামর বাঙালির জীবনে এ নিয়ে তেমন কোনো উচ্ছ্বাস নেই। থাকার কথাও নয়। এখানে মে দিবস আসে নেহায়েত ৩০ এপ্রিলের পরের দিন ১লা মে, সেই হিসেবে। ওই দিন সরকারি ছুটি থাকে বলে মধ্যবিত্ত বাঙালিরা বউ বাচ্চা নিয়ে একটু ঘুরতে টুরতে বেরোয়। পয়লা বৈশাখের মত পান্তা ইলিশের জবজবানি নেই। ভ্যালেন্টাইন দিবসের মত রংচঙা কাপড় চোপড় পরে একে অপরকে খামোখা ভালোবাসার ছেনালি দেখাবার সুযোগও নেই।

আর বছরের মত এবারও এই দিনটিতে সরকার প্রধান, মন্ত্রীবর্গ, রাষ্ট্র প্রধান, প্রধান বিরোধী দল, ছাও পোনা বিরোধী বা সহমতের দলগুলো বাণী দেবে। খুব সকালে পরিবহন শ্রমিকরা মাথায় লাল পট্টি বেঁধে বিনা ভাড়ার বাসে-ট্রাকে মিছিল করে হৈহুল্লোড় করবে। নেতা-নেত্রীরা এখানে ওখানে ভাষন টাষন দেবেন। মিডিয়ায় দিন ভর আরোপিত শ্রমিক দরদি কাসুন্দি বেটে দর্শককে খাওয়ানো হবে। রাতে তাবড় তাবড় সব বিদ্ব্যৎজনেরা স্টুপিড বাক্সো গরম করে ফেলবেন। বেসুরো হেঁড়ে গলায় এক স্বখ্যাত বিপ্লবী ‘জন হেনরী’ গান গেয়ে বাবরি চুল ঝাঁকিয়ে মাতম করবেন। পত্রিকাঅলারা প্রথম পাতার কোণায় এক ইট ভাঙ্গা শ্রমিকের বা নারী শ্রমিকের ছবি ছেপে ক্যাপশন লিখবে.....‘আজ ঐতিহাসিক মে দিবস’! ‘আজও কি শ্রমিকের মুক্তি এসেছে?’ এবং রাত ফুরোলেই ওই মহান মে দিবসের যবনিকা টেনে দেয়া হবে।

কিন্তু, যে শিশু শ্রমিকটি বাসা বাড়িতে অগুনতি ঘণ্টা ধরে গাধার খাটনি খেটে চলেছে, খুব ভোরে উঠে যার দিন শুরু, আবার রাতে সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হলে যার ঘুমোনোর সময়, তার জন্য কোন আট ঘণ্টার মহান মে দিবস নেই। সে জানেও না আট ঘণ্টা মানে কত ঘণ্টা? ট্যানারির নাড়িভুড়ি বেরিয়ে যাওয়া গন্ধময় পরিবেশে যে শ্রমিকরা কাজ করছে, তাদের সাথে যে শিশু শ্রমিকরা নোংরা ময়লা ঘেটে জীবনের সুকুমার শৈশবকে মাটি চাপা দিচ্ছে, বয়লারের পাশে গনগনে আগুনের পাশে দাঁড়ানো যে শ্রমিকটির মুখ সারাক্ষণই লাল হয়ে জ্বলছে, শহরের বাইরে মায়ের সাথে ইট ভাঙ্গছে যে কচি শিশুটি তার কাছেও মে দিবস কোন গুরুত্ব বহন করে না। সে জানে তার হাতে ধরা হাতুড়ি একটু বেসামাল হলেই আর এক হাতে পড়বে! চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাবে।
সায়েবদের বাজার বয়ে বয়ে বাড়ি পৌছে দেয়া শত শত কচি ছেলে মেয়েগুলো সেই কাক ডাকা ভোরে উঠে বাজারে আসে। ওখানেই খায়, ওখানেই ঘুমায়। ডাইং ফ্যাক্টরিতে যারা কাজ করে তাদের কারো হাতে গ্লাভস নেই। কস্টিক সোডা, ব্লঙ্কা ফল, এসিটিক এসিড, রেজিন, ব্লিচিং পাউডার আর এমন হরেক রকম জটিল রাসায়নিকে ভিজে তাদের হাতগুলো থ্যাকথেকে সাদা সাদা হয়ে আছে। সেই দগদগে ঘা কখনোই শুকোয় না। ঝাল মরিচে রান্না তরকারি দিয়ে ভাত খেতে গেলই অন্তরাত্মা পর্যন্ত জ্বলে উঠে। চোখের পানি গাল বেয়ে ঠোঁটের কোণা দিয়ে মুখে চলে যায়। ওভাবেই দিন শুরু আর দিন শেষ! দয়াগঞ্জ ব্রিজের দুপাশে দাঁড়ানো যে শিশুরা তাদেরও জীবন শুরু হয় খুব ভোরে। বোঝাই রিকসা ঠেলে ঠেলে ব্রিজ পার করা তাদের কাজ। এখানে আট ঘণ্টা নামক কোনো ব্যাপার নেই। সারা ঢাকা শহরে শকুনের মত শ্যেন দৃষ্টি মেলে আরো হাজার হাজার শিশুর দিন শুরু হয়। তারা কাগজ কুড়োয়। এক হাতে পলিথিনের বস্তা আর এক হাতে ক্রমাগত কাগজ কুড়িয়ে চলে। ওদেরও শ্রম দিবস মানে বার থেকে ষোল ঘণ্টা।
এই মহানগরীতে ঠিক কত লাখ শ্রমিক এবং সেই সব শ্রমিকের কত লাখ অপ্রাপ্ত বয়সের শিশু শ্রমিক তার কোন খতিয়ান মহান রাষ্ট্রের কোন দপ্তরে নেই। ঠিক কত লাখ ‘কাজের মেয়ে’ এই মহানগরীতে শ্রম শোষণের শিকার, কত লাখ নারী-পুরুষ বাসা বাড়িতে যৌন হয়রানির শিকার, কত লাখ অপরিণত বয়সী মেয়ে বাড়ির কর্তা, দারোয়ান, গ্রামের আত্মিয়, ড্রাইভার আর এই টাইপ অফিসিয়াল ধর্ষকের দ্বারা ধর্ষিত তারও কোন অথেনটিক স্ট্যাটাস সরকারের হাতে বা তথাকথিত মানবাধীকার সংগঠনগুলোর কাছে নেই। এদের কেউ তার কর্ম জীবনে আট ঘণ্টা বলে যে একটা শব্দ আছে সেটাই জানেনি। বোঝেনি। তাদের জানতে বা বুঝতে দেয়া হয়নি।

শ্রম শোষণ বা শ্রম চুরির মত একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয় নিয়ে এই রাষ্ট্র, সরকার, বিরোধী দল, ছোট বড় হেন-ত্যান দল এবং বুদ্ধিব্যাপারিদের কোন চিন্তা নেই। এ নিয়ে সংবিধান সংশোধনও হবে না, সংসদে কোনো বিলও পাশ হবে না। অথচ সারা দেশে প্রায় সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় কোটি গতরখাটা শ্রমিকের সিংহভাগই শ্রম শোষণের শিকার। সেই অজ পাড়াগাঁ থেকে শুরু করে এই তিলোত্তমা মহানগরীতে বেশুমার সেই শ্রম শোষণ আর শ্রমচুরি চলছে। এদেশে যে কোটি কোটি ক্ষেতমজুর সারা দিনমান শ্রম দিয়ে চলে তারা অফিসিয়ালি শ্রমিক নয়! সরাসরি এই চুরির সাথে জড়িত এ দেশের প্রায় সকল বিত্তবান, মধ্যবিত্ত এবং ক্ষুদে বিত্তের মালিকগণ।
‘এই দেশে গার্মেন্ট এসে কাজের বুয়া পাওয়া যায় না, তাদের এখন বেজায় দেমাগ, বাসায় কাজের চেয়ে তারা গার্মেন্টে কাজ করে যুৎ পায়’, এই টাইপ ‘হতচ্ছাড়াদের’ কারণে এই মহানগরীর তামাম গৃহবধূ বিরক্ত, রুষ্ঠ! যে মেয়েটি বাসায় কাজ করার বদলে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে কাজ করে সে মনে করে এখানে বার ঘণ্টা কাজ করলেও সকাল-বিকাল মালকিনের লাথি গুতো নেই। কিন্তু লাথি গুতো যাদের নিত্যসঙ্গি তারা পার পাবে কি করে? গার্মেন্টেও ওদের ছোট ছোট শরীরের ওপর বড় বড় শরীর রাত বিরেতে উঠে পড়ে। ‘না’ করতে পারে না। ‘না’ বললে চাকরি থাকবে না। ওই অপারেটারদের ভেতর থেকেই কোনো কোনো মেয়েকে যারা দেখতে একটু ভালো তাদের ডাক পড়ে মালিকের খাস চেম্বারে। ওই সব মালিকরা বেশ তৃপ্তি সহকারেই বলেন- ‘বাজারের অসুখ বিসুখঅলাদের চেয়ে এরাই ভালো!’

ওই যে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় কোটি গতরখাটা শ্রমিকের প্রায় এক তৃতীয়াংশই শিশু শ্রমিক। বিশ্বের আর কোথাও বিভিন্ন বিপজ্জনক সেক্টরে এত শিশু শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো হয় না। এখানে হয়, কারণ এখানকার শিল্পপতি থেকে শুরু করে হালের মডার্ণ আইটি স্পেশালিস্ট, টেকনোলজিস্ট, সিভিল ব্যুরোক্র্যাট, মিলিটারি ব্যুরোক্র্যাট, বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত নিয়মর্ডানিস্ট, একেবারে হালের তরুণ প্রজন্ম সবাই সেই পিতৃপুরুষের এস্তেমালের সামন্তবাদে আক্রান্ত। ভীষণভাবে আক্রান্ত। সামন্ত প্রভুদের জুতো মোজা খুলে দেয়ার জন্য, অজুর পানি দেয়ার জন্য, মাথায় ছাতা ধরার জন্য, ভেতর বাড়ি থেকে পানটা সুপারীটা এনে দেয়ার জন্য একটা ‘পিচ্চির’ দরকার হয়। অথচ পুঁজিবাদে সক্ষম এবং স্কিল্ড শ্রমিক একটা এ্যাসেট। পুঁজিবাদ সেই এ্যাসেটকে বাঁচিয়ে রাখে, তাকে দিয়ে আগামী দিনেও যেন কারখানার চাকা চালু রাখা যায়। সে কারণে পুঁজিবাদের চরম উৎকর্ষেও স্কিল্ড শ্রমিকের চাহিদা ফুরোয় না।

কিন্তু সামন্তপ্রভুরা জানেন, ওদের না বাঁচলেও চলবে, কারণ কালই আবার ঝাঁকে ঝাঁকে পয়দা হতে থাকবে। সামন্তপ্রভুর কাছে শ্রমের বিনিময় মূল্য স্রেফ পেটেভাতে! পেট পুরে ভাত দেয়া হয়, এটাই সামন্তবাদের মহান বদান্যতা! আর বছর বছর জিডিপি নিয়ে রেমিট্যান্স নিয়ে ভেরেন্ডাভাজা আমলা-চামচাদের চিৎকার চেচামেচির পরও, লাখ লাখ শ্রমিক বিদেশে কাজ করে কড়কড়ে কারেন্সি নোট কামাই করে আনলেও, আইটি দিয়ে ডিজিটাল সিস্টেমে দেশ ভরিয়ে দেয়ার কেতাবি ঘোষণার পরও এদেশে যথাযথ পুঁজিবাদী সংস্কৃতি গড়ে উঠল না। অনুদান দেয়া আমেরিকা মাঝে মাঝে শিশু শ্রম নিয়ে, কল কারখানায় বিশেষ করে গার্মেন্ট কারখানায় শ্রমিকদের সিবিএ বা বার্গেনিং অথোরিটি করার হুমকি টুমকি দিলে এদেশী চামচারা এক গাল হেসে দিয়ে বলেন- ‘স্যার ও দেখতে ছোট, কিন্তু লইতে পারে’! সাদা সায়েবরা এই জঘণ্য কুৎসিত ইঙ্গিত বোঝেন না। তারা ভাবেন গ্রোথ কম! তারা টিক মার্ক দিয়ে দেন। শিশুরা শ্রমিক ‘শ্রম বঞ্চিত’ হয় না! অর্থাৎ শিশুদেরও কাজের সুযোগ দেয়া হলো! এই আধা সামন্তবাদী- আধা পুঁজিবাদী জগাখিঁচুড়ি পাশবিক বণিক সমাজে তাই মে দিবস এবং সেই সেই দিবসের প্রতিপাদ্য এটুকুই যে দিনটি শ্রমিকদের দিন!

ইতিহাসের মে দিবসঃ
অগাস্ট স্পীজসহ ১৮ জন শ্রমিকের আত্মাহূতির বিনিময়ে আট ঘণ্টা কাজের অধিকার পাওয়ার পর পেরিয়ে গেছে একশ পনের বছর। সেই ১৮৮৬ সালের পয়লা মে শিকাগোর হে মার্কেটের শ্রমিকদের জীবনের মূল্যে যে আট ঘণ্টা শ্রমের দাবি তা আজও বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বাস্তবায়ন হয়নি। এই একশ পনের বছর পৃথিবী তার কক্ষপথে নিয়ম করে ঘুরেছে। দেশে দেশে শ্রমিক শ্রেণীর সরকার কায়েম হয়ে আবার পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে রূপান্তর ঘটেছে। গোলার্ধের এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত এখনো ন্যুনতম শ্রমের মজুরির দাবি উপেক্ষিত। এখনো শ্রমিককে তার সেই আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন করতে হয়। এখনো শ্রমিককে আট ঘণ্টার বদলে দশ ঘণ্টা এমনকি বার ঘণ্টা কাজ করিয়ে সেই আট ঘণ্টার হিসেবেই মজুরি দেয়া হয়। এত কিছুর পরও বছরের এই একটি দিন, পহেলা মে, এই দিনটি যেন শ্রমিকদের বিজয়ের দিন! এই একটি দিনেই যেন সারা বিশ্বের শ্রমিক তার মুক্তির দিন মনে করে ক্ষণিকের উল্লাস করে। আসলেই কি শ্রমিকের মুক্তি ঘটেছে? শ্রমিক কি তার প্রাপ্য মজুরি পেয়েছে, বা পাচ্ছে? বিশ্বের অন্যান্য দেশের কথা নয়, এই বাংলাদেশে কি শ্রমিক আজও তার ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে? না। পাচ্ছে না। আজ থেকে একচল্লিশ বছর আগে এই দেশটি যখন পাকিস্তানের উপনিবেশ ছিল তখনও পায়নি। একাত্তরে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার একচল্লিশ বছর পরও শ্রমিক আজও এই দেশের সবচেয়ে অবহেলিত, সবচেয়ে নিগৃহীত এক জনগোষ্ঠি বিশেষ। আমাদের শ্রমিকদের হাল সাকিন জানার আগে দেখে নেয়া যাক মে দিবসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ

১৮৮৬ সালের ১লা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে ৮ ঘন্টা শ্রমদিনের দাবীতে আন্দোলনরত শ্রমিকের ওপর পুলিশ গুলি চালালে ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন। এই ঘটনার আগে শ্রমিকদের প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘন্টা আর সপ্তাহে ৬ দিন শ্রম দিতে হতো। বিপরীতে মজুরী মিলত নগন্য, এবং সেই কম মজুরি দিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হতো তাদের। কোথাও কোথাও তা দাসবৃত্তির পর্যায়ে পড়ত। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন, এবং তাদের এ দাবী কার্যকর করার জন্য তারা সময় বেঁধে দেন ১৮৮৬ সালের ১লা মে। কিন্তু কারখানা মালিকগণ এ দাবী মেনে নেয়নি। ৪ঠা মে ১৮৮৬ সালে সন্ধ্যাবেলা হালকা বৃষ্টির মধ্যে শিকাগোর হে-মার্কেটে শ্রমিকরা মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হন। আগস্ট স্পীজ নামে এক নেতা জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন। হঠাৎ দূরে দাড়ানো পুলিশ দলের কাছে একটি বোমার বিস্ফোরন ঘটে, এতে এক পুলিশ নিহত হয়। এবং সাথে সাথে পুলিশবাহিনী শ্রমিকদের উপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে। হামলায় ঘটনাস্থলেই ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন। আবার পুলিশ হত্যা মামলায় আগস্ট স্পীজ সহ আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়। এক প্রহসনমূলক বিচারের পর ১৮৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর প্রকাশ্যে ৬ জন শ্রমিকের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। লুইস লিং নামে একজন একদিন পূর্বেই কারাভ্যন্তরে আত্মহত্যা করেন, অন্য একজনের পনের বছরের কারাদন্ড হয়। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে আগস্ট স্পীজ বলেছিলেন, "আজ আমাদের এই নি:শব্দতা, তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হবে"। শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের "দৈনিক আট ঘন্টা কাজ করার দাবী সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায়। আর পহেলা মে বা মে দিবস প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দাবী আদায়ের দিন হিসেবে।

বাংলাদেশে সরকারি আধা সরকারি কল কারখানাগুলোতে যেখানে শিফ্ট চালু আছে সেখানে কোথাও কোথাও দিনে আট ঘণ্টা কাজের নিয়ম পালিত হলেও সারা দেশে লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে দশ-বার ঘণ্টা, কোথাও কোথাও ষোল ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করানো হয়। অফিসিয়ালি বলা হয়, অতিরিক্ত শ্রম ঘণ্টার জন্য ওভারটাইম দেয়া হয়। কিন্তু যে সব সেক্টরে শ্রমিকদের বার্গেনিং এজেন্ট বা সিবিএ আছে সেই সব সেক্টর ছাড়া আর কোথাও ওভারটাইমের টাকা যথাযথভাবে আদায় করা যায় না। বাংলাদেশে গার্মেন্ট চালু হওয়ার আগে দুএকটা বড় বড় কল কারখানায় যে শিল্প শ্রমিকরা কাজ করত তাদেরই ধরে নেয়া হতো দেশের সবচেয়ে সংগঠিত শিল্পীয় শ্রমিক। গার্মেন্ট চালু হওয়ার পর এখন এটাই সবচেয়ে শ্রমঘন সেক্টর। বাইশ থেকে পচিশশ’ গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে প্রায় চার থেকে সাড়ে চার লাখ শ্রমিক কাজ করে। এবং বিস্ময়করভাবে এই সেক্টরে শ্রমিকদের দাবি আদায়ের জন্য কোনো সিবিএ বা বার্গেনিং এজন্ট নেই। তার বদলে বিভিন্ন নামে সরকারি ছত্র ছায়ায় এবং কয়েকটি বিরোধী দলীয় সমর্থনপুষ্ট শ্রমিক সমিতি আছে যারা মাঝে মাঝে মালিক পক্ষের সাথে দেন-দরবার করে তাদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করে। এবং অবধারিতভাবে তাদের দাবি আদায় তো হয়ই না, বরং সেই দাবি আদায়ের পদ্ধতিকে দেশের তামাম বুজর্গ, বুদ্ধিজীবী, বিদ্যাজীবী এবং রংবেরঙের সুশীল সমাজপতিরা হঠকারি আখ্যা দিয়ে এর বিপক্ষে দাঁড়ায়।

এটা অনেকটা নিয়মের মতই হয়ে গেছে যে, শ্রমিকরা তাদের বেতন ভাতা, বোনাস, ওভারটাইমের দাবিতে কর্মবিরতী করবে, কারখানা গেটের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করবে। এক সময় পোশাক শ্রমিকদের জন্য হিংস্রভাবে গড়ে তোলা বিশেষ পুলিশ আসবে, র‌্যাব-বিডিআর আসবে, বিশেষ বাহিনী আসবে। এবং নির্বিচারে শ্রমিকদের উপর নির্মম নির্যাতন চালাবে। ঘটনাস্থলেই কিছু শ্রমিক মারা যাবে। হাসপাতালে এবং পথে ঘাটে আরো কিছু মারা যাবে। কিছু শ্রমিককে মালিকের পোষা গুণ্ডারা পিটিয়ে হত্যা করবে। কিছু শ্রমিকের লাশ ওই বিশেষ বাহিনী গুম করে দেবে। চূড়ান্ত বিচারে দেখা যাবে দশ-পনের হাজার নাম না জানা শ্রমিকের বিরুদ্ধে অমুক থানায় হত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং লুটতরাজের মামলা দেয়া হবে। ওই মামলায় এর পরে যাকে তাকে ধরে আসামি বানিয়ে দেয়া হবে। আর এই শ্রমিক নিধনের নির্লজ্জ খেলাটা প্রকাশ্যে এদেশের বিশেষ বাহিনী মালিক পক্ষের সহায়তায় সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে খেলবে। এবং এটা প্রায় রোজকার নিয়ম।

এর পরও যদি শ্রমিকরা তাদের দাবি টাবি নিয়ে আরো একটু স্বোচ্চার হতে চায় তাহলে তাদেরকে কারখানার ভেতরে রেখে বাইরে থেকে দরোজা জানালা বন্ধ করে মেইন গেটে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে পালিয়ে যাবে সিকিউরিটি গার্ড নামক পোষা চামচারা। তারপর খুব ঠাণ্ডা মাথায় কারখানায় আগুণ ধরিয়ে দেয়া হবে। জ্যান্ত পুড়ে মরবে ডজন ডজন হতভাগা শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা দিন শেষে প্রতিবেদন দেবে-‘সর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে’! সরকার এবং মালিক পক্ষ তিন বা চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করবে। সেই কমিটি দিন সাতেক বা দিন দশেক পরে একটা তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবে। যা কোনো দিনও আলোর মুখ দেখবে না। মোদ্দা কথা হচ্ছে এই সেক্টরে যে হতভাগা শ্রমিকরা কাজ করে তারা নির্ভেজাল দাস। সেই দাসদের যতদিন সম্ভব শ্রম শুষে নিতে হবে। যখন তার শ্রম সসীম হয়ে যাবে, অর্থাৎ তাকে দিয়ে আর আগের মত গাধার খাটনি খাটানো যাবে না তখন তাকে বা সেই শ্রমিক গোষ্ঠিকে হয় ছাঁটাই করা হবে, নয়ত বাড়াবাড়ি করলে স্রেফ পুড়িয়ে মারা হবে। এবং বছরের পর বছর এই ঠাণ্ডা মাথার হত্যাকাণ্ড ঘটে চলেছে বাংলাদেশের গার্মেন্ট সেক্টরে। এ নিয়ে এই দেশের তাবড় তাবড় জ্ঞানীগুণী বুদ্ধিব্যাপারিদের কোনোও মাথা ব্যথা নেই। যে সব শ্রমিক নেতারা এই শ্রমিকদের পক্ষে কিছু বলতে চাইবে তাদের ‘পাশ্ববর্তী দেশের চর’ বা ‘বিদেশী ষড়যন্ত্রকারিদের চক্রান্ত বাস্তবায়নকারি’ আখ্যা দিয়ে ধরে ধরে জেলে পোরা হবে, নির্যাতন করা হবে।

এই সেক্টরের বাইরে সারা দেশ নয়, শুধু মাত্র ঢাকা শহরেই প্রায় চার থেকে সাড়ে চার লাখ শিশু শ্রমিককে দিয়ে অমানবিক কাজ করানো হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস তাদের অমানবিকতার বিরুদ্ধে কোনো বার্তা বয়ে আনে না। ঢাকাতে সব চেয়ে বেশি শিশু শ্রমিক কাজ করে বাসা বাড়িতে আর হোটেল রেস্তোরাগুলোতে। বাসা বাড়িতে যারা কাজ করে তাদের কোন শ্রম ঘণ্টা নেই। ভোর থেকে শুরু করে রাত বারটা একটায় ঘুমানোর আগ পর্যন্ত তাদের শ্রম ঘণ্টা।খাওয়া-পরা সমেত বেতন এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। খাওয়া পরা বাদে বেতন দেড় হাজার থেকে দুই হাজার। হোটেল রেস্তোরাগুলোয় যে শিশু শ্রমিকরা কাজ করে তাদের বেতন আরো কম। খুব ভোর থেকে শুরু করে হোটেল রেস্তোরা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত এদের কাজ করতে হয়। নোংরা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, গুমোট গরমে সেদ্দ হয়ে সারা রাত ঘুমোতে না পারা এই সব ক্রমিকরা জানেও না শ্রম দিবস কি, বা মে দিবস কি? শুধু যে এদের শ্রম শোষণ করা হয় তা নয়। এদের সাথে আরো জঘণ্য কর্মকাণ্ড করা হয়। সিনিয়র শ্রমিক বা হেড বেয়ারা যারা আছে তারা এই সব শিশু শ্রমিকদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। এবং প্রায় সবাইকেই কোনো না কোনো সময় বলাৎকারের শিকার হতে হয়।

একানব্বই সালে ক্রেমলিনের চার দেয়াল ভেদ করে পুঁজিবাদী দানব বেরিয়ে এসে সমগ্র পৃথিবীকে আবার নতুন করে গ্রাস করে ফেলার পরও এ দিন মস্কোর রেড স্ক্যয়ারে অশতিপর বৃদ্ধ বৃদ্ধারা লাল পতাকা নিয়ে হাজির হবেন। অপসারিত লেনিনের মুর্তির পাদদেশে ক্ষণিক তাকিয়ে থাকবেন। ১৯১৭ সালের পর এই রেড স্ক্যয়ারে মে দিবসে কি কি ঘটত সে সব ধূসর হয়ে যাওয়া স্মৃতি মন্থণ করবেন। তার পরও তারা সারা দিন ওই রেড স্ক্যয়ারে পড়ে থাকবেন। প্যারিসের ল্যূভার স্ক্যয়ারে, স্পেনের রাজ প্রাসাদের বাইরে, বনের ফ্রিডম স্ক্যয়ারে, তিরানার হোক্সা এভেন্যুতে, চীনের তিয়েনআনমেন স্ক্যয়ারে, ভিয়েতনামের হো চি মিন স্ক্যয়ারে, হাভানার চে স্ক্যয়ারে হাজার হাজার শ্রমিক এ দিনও সমবেত হবেন। হয়ত নতুন করে শ্রমিকের মুক্তির শপথ নেবেন। হয়ত কিছুই করবেন না। হয়ত সারা দিন দাঁড়িয়ে বা বসে সেই সব পুরোনো স্মৃতি হাতড়ে হাতড়ে একরাশ হতাশা বুকে নিয়ে আবার ঘরে ফিরে যাবেন। ইউরোপের দেশে দেশে গত এক দশক ধরে নতুন করে যে বিক্ষোভ দানা বেঁধে পাথরের মত শক্ত হতে শুরু করেছে। সেই পাথরের দৃঢ়তা নিয়ে তারা আরো একটু এগুতে চাইলে হয়ত পুলিশ গুলি ছুড়বে। হয়ত এই মে দিবসেই সারা বিশ্বে পুলিশের গুলিতে আরো শত শত শ্রমিকের মৃত্যু ঘটবে! তার পরও, এত সব হতাশার খণ্ডচিত্রের পরও সারা বিশ্বের শ্রমিক এ দিন তাদের মত করে পৃথিবীকে আরো একবার যাচাই করে দেখে নিতে চাইবে। নতুন একজন অগাস্ট স্পীজ তাদের সামনে এসে না দাঁড়ালেও তারা এই আশায় আবারো বুকের গহিনে বজ্র নিনাদ শুনবে। এক সময় মনের গহিনে ক্ষীণ হলেও সেই আশার সঞ্চার ঘটিয়ে ঘরে ফিরবে- একদিন এই পৃথিবীটা আমাদের জন্য বাসযোগ্য হয়ে উঠবে। একদিন আমরাই এই পৃথিবী থেকে মানুষে মানুষে শোষণ বঞ্চণা দূর করে বৈরী দয়ামায়হীন পৃথিবীটাকে সব মানুষের জন্য বাসযোগ্য করে তুলব। কেননা একমাত্র শ্রমিকরাই পারে একটি সোনালী আগামীর জন্ম দিতে। এবং তারা তা দেবেনও। আজ বা কাল। 
এইসব বৃদ্ধ মানুষেরা আজও সমবেত হয় মস্কোর রেড স্ক্যয়ারে।

১৯৬৬ সালে মস্কোর রেড স্ক্যয়ারে মে-ডে মিছিল।

হাভানার মে দিবসের র‌্যালি।

তুরষ্কের ইস্তাম্বুলে বৃহত্তম মে-দিবসের সমাবেশ।

ইন্দোনেশিয়ার মহান নেতা সুকর্ণর উপস্থিতিতে মে-দিবসের সমাবেশ।
 

৬ এপ্রি, ২০১১

এই কবিতাটির কোনো শিরোনাম নেই!



প্রিয়তম তোমায় বলেছি,
নাজিম আমার প্রিয় কবি।
নাজিম হিকমত সম্ভ্রান্ত পাশা,
কিন্তু নাজিম কমিউনিস্ট!
প্রিয়তমা তোমাকে আরো বলেছি;
নাজিমকে ওরা ৫৬ বছর জেল দিয়েছিল!
ছাপ্পান্নটা বছর, যা তার জীবনের চেয়েও বেশী!

প্রিয়তমা ওরা আমায় জেল দেয়নি,
দিয়েছে কালাপানি, দ্বীপান্তর।
আন্দামান-নিকোবর হয়ে আরো দূরে
সেই কিরিবেতি।
আমার চারধারে অথৈ জলরাশী।
সেখানে ঢেউয়ের মাথায়
সফেদ ফেনায় রোদের লুকোচুরি,
হাওয়ায় ভাসানো গাংচিলের ডানা।
আমার চারধারে জলরাশী শেষ হলে
চার চারটি নিরেট দেয়াল।
কংক্রিটের পলেস্তারায় আমি
তোমাকে দেখি প্রিয়তমা আমার!

আমার এখানে যখন রাত নামে,
যখন পাখিরা আর ডানা মেলে ওড়ে না,
তখনো আমার ভেতরে প্রবল বাতাসে
নিজেকে অটুট রাখার আকুল ডানা ঝাপটানি!
আমি ডানা ঝাপটাই আর পালাতে থাকি।
জীবন থেকে জীবনে, মরণ থেকে মরণে!
ওরা আমায় ফাঁসী দেয়নি, দিয়েছে দ্বীপান্তর।

তোমার মনে আছে? আমি বলেছিলাম-
নাজিমের কথা? নাজিম বলেছিলো-

‘প্রিয়তমা আমার
তোমার শেষ চিঠিতে
তুমি লিখেছ ;
মাথা আমার ব্যথায় টন্ টন্ করছে
দিশেহারা আমার হৃদয়।

তুমি লিখেছ ;
যদি ওরা তেমাকে ফাঁসী দেয়
তেমাকে যদি হারাই
আমি বাঁচব না।

তুমি বেঁচে থাকবে প্রিয়তমা বধু আমার,
আমার স্মৃতি কালো ধোঁয়ার মত হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে
তুমি বেঁচে থাকবে, আমার হৃদয়ের রক্তকেশী ভগিনী,
বিংশ শতাব্দীতে
মানুষের শোকের আয়ূ
বড় জোর এক বছর।’

আমি জানি ওরা আমায়
ফাঁসী দেবে না।
আমার চোখে কালো কাপড় বেধে
ওরা সটান নিয়ে যাবে আমার
সেই প্রাণ প্রিয় গ্রামের
কোনো নিভৃত খোলা মাঠে।
আমাকে ওরা গোসল করাবে,
দোয়া পড়াবে।
তারপর একটা তপ্ত সীসে আমার বুকে এসে বিঁধবে!
আমি যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে
তোমাকেই ভাবব বলে মরার আগে
শেষ পর্যন্ত তোমার কথা মাথায় গেঁথে রাখব
প্রিয়তমা আমার!

আমি এখন তোমার পাশে বসে
সেই চিরচেনা তিলটি দেখছি,
তোমার অনাবৃত স্কন্ধে
সেই ছোট্ট তিলটির দিকে
অপলক তাকিয়ে আছি, ঠিক সেই সময় প্রিয়তমা ,
ঠিক তখনই আরো একটি লাশ পড়ল!
আরো একজন সাথী আমার একাকী হলো!

আমি যেদিন মনে মনে
তোমার শত ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে
তোমার সিক্ত অধরে ধাবমান,
ঠিক তখনই আমার আরো একজন সাথীর বুকে
ছোট্ট এক টুকরো
সীসে ঢুকিয়ে দেয়া হলো।
প্রিয়তমা, আমি যত বার তোমাকে দেখি,
স্বপনে এবং জাগরণে,
দেখি অনিমেষ কালো রাতের
কালো জোৎস্নানায়, কালো বন্যায়,
দেখি ততবারই আমার একজন সাথীকে
ওরা হত্যা করে!

প্রিয়তম, তুমি চেয়েছিলে
আমি যেন সুস্থ্য থাকি, ভালো থাকি।
তুমি ব্যাকুল হয়ে বলেছিলে-
সময় মত ওষুধটা হাতের কাছে রেখো,
রাতে যেন ঘুমোতে ভুলো না।
প্রিয়তমা তুমি অত দূরে বসে
দেখতে পারো না,
আমি যতবার ঘুমোই-
ততবারই তোমাকে হারাই।
আমি যত বার জাগি- তোমাকে হারাই।
আমি যত বার তোমাকে ভাবি- তত বারই
আমার এক কমরেড মাটিতে লুটিয়ে পড়ে!
আমি একা হয়ে যাই,
ক্রমশঃ একা হতে থাকি।

আমি জানি নিবীর্য কাপুষের দল
তোমাকে আমার থেকে ছিনিয়ে নেয়ার
সহজতম পথটি খুঁজে পেয়েছে।
ওরা আমাকে তুমিহীন করার
অব্যর্থ উপায় পেয়েছে।

ওরা আমাকে তোমার সারা জীবনের স্মৃতি সমেত
কোন এক কালো রাতে, কালো কাপড়ে
আমার সেই চোখ; যা তুমি
বারে বারে ছুঁয়ে দেখেছ,
সেই চোখে কালো কাপড় বেধে দাঁড় করাবে
কোনো এক নির্জন ধানক্ষেতে।
তারপর নিয়ম মেনে নিয়ম শেখাবে।
আমি শুধু তোমাকে, তোমাকেই,
শুধু তোমাকেই আর একটি বার
দেখতে চাইব প্রিয়তমা!

কিন্তু আমি জানি ওরা তা দেবে না।
এই নিরেট কংক্রিটের দেয়াল, 
সফেদ ফেনা, গাংচিল আর
নিকষ কালো পানিকে স্বাক্ষী রেখে
আমি তোমাকে হারাব প্রিয়তমা!

শেষের সেই সময় তোমাকে হারানোর
কষ্ট আরো তীব্র হয়ে উঠলেও
আমি শান্তিতে মরতে পারব,
কারণ আমি আর জানব না
আমার আর কোন কোন সাথী
খুব ভোর বেলায় স্বজনহীন,
প্রিয়তমহীন হয়ে তোমাদের এই
সাধের পৃথিবী থেকে চলে গেল!
শেয়াল শকুনেরা মাংস খুবলে
নেয়ার সময় ভাবে না এখানে
কার পেলব হাতের স্পর্শ ছিল!

শত শত পঁচে যাওয়া দলিত মাংস
কঙ্কাল শরীরে উঠে আসবে,
বেজন্মা জারজ সময় স্বাক্ষ্য দেবে না,
তবুও তারা উঠে আসবে।
প্রেয়সীর ভেজা ঠোঁট, মরাল গ্রীবা,
উন্নত নাকের ভাঁজে জমে থাকা ক্লেদ বিন্দু,
গহিনে জড়িয়ে থাকা অবুঝ প্রেমের স্পর্শে
তারা উঠে আসবে।
কেননা তারা জানে নাজিমের সময়ে
এক বছরের শোকের আয়ু
এখন বড় জোর দুদিন!

প্রিয়তম আমার , এই শেষের বেলায়
আমার চোখে কি লেখা তা যদি
ওরা পড়তে পারে,
দেখবে সেখানে শত সহস্র শব্দে
আকাশ ছোঁয়া বিশাল ক্যানভাসে
আঁকা তোমার মুখটি দেখতে চাই।
একবার প্রাণভরে তোমকে
দেখতে চাই প্রিয়তমা!
আমার মাথার সেই পুরোনো ব্যথাটা
তোমাকে উপহার দিতে চাই!
আমার না থাকা সময়ে যেন তুমি অনুভবে
অস্তিত্বে মেখে নিতে পারো সেই ব্যথা,
যা আমি আজন্ম বয়ে বেড়িয়েছি!

-------------------------------------

৩১ মার্চ ২০১১

















১৬ মার্চ, ২০১১

মহারাজের বিদায়ে আরও একপোঁচ রং হারাল ক্রিকেট !



১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৩৯

কোলকাতায় লেখক মহলে একটা বেশ চালু প্রবাদ এরকমঃ "আজও মানুষ হলো না বাঙালি ! এরা সেই প্রজন্মের মানুষ,যারা সৌরভকে ডিফেন্ড করে না,মিছিলে যায় না,রবীন্দ্রনাথ পড়ে না’।" অর্থাৎ বাঙালি এখন যা-ই করুক তার ভেতর কোন না কোন ভাবে সৌরভ এসে যায়।যে লোকটিকে নিয়ে এই প্রবাদ সেই সৌরভ চন্ডিদাস গাঙ্গুলি ক্রিকেটকে আরো খানিকটা আকর্ষণহীন করে ব্যাট গ্লাভস প্যাড খুলে ফেললেন।প্রতিশ্রুতি মত নাগপুর টেস্টের পরই চিরচেনা মাঠকে বিদায় জানালেন।ড্রপসিন পড়েগেল এক যুগের ক্যারিয়ারে।বাইশ গজের ওই সাদা মত জায়গাটা ছেড়ে আসার সময় রেখে এলেন বিশাল মাপের কীর্তিগাথা আর সহস্র দিনের অম্লমধুর স্মৃতি।

ভারতের ক্রিকেট ইতিহাস যত দিন পঠিত হবে,ততদিন সৌরভের নাম উচ্চারিত হতে হবে।এই ভেতো বাঙালি বাবুই ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের সব চেয়ে সফলতম অধিনায়ক।পাকিস্তানের মাটি থেকে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ী অধিনায়ক।উপমহাদেশের বাইরে থেকে ভারতের হয়ে প্রথম টেস্ট সিরিজ জিতে আনা অধিনায়ক।এরকম আরো অনেক রেকর্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই বাঙালির নাম।ক্রিকেট এরিনায় যখনই সৌরভের নামটা উচ্চারিত হয় তখনই সৌরভ শুধু ভারতের বা পশ্চিম বঙ্গের সৌরভ থাকেন না, হয়ে ওঠেন ২৫ কোটি বাঙালির প্রতিনিধি। আমাদের এই বাংলাদেশও তাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে। ৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অংশ নেয়ার আগে সৌরভই প্রথম বাঙালি যিনি বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করেছেন। রেকর্ড টেকর্ড নিয়ে বলতে শুরু করলে শেষ হবে না। ক্রিকেট মানেই শত সহস্র রেকর্ড ভরা প্যানডোরার বাক্স।

এমনিতেই এখন আর ক্রিকেট তেমন করে টানে না। শৈশবে রেডিওতে শোনা সেই সময়কার গর্ডন গ্রিনিজ,হেইন্স,ভিভ রিচার্ডস,তারও আগে আলভিন কালিচরণ,জেফ্রি ডুজন,গ্যারি সোবার্স, গাভাস্কার,বিশ্বনাথ মুনসুর আলী খান পতৌদি, একনাথ সোলকার,ডেভিড গাওয়ারদের খেলা আর বর্তমানের মিকিমাউস ওয়ানডে বা কর্পোরেট টি টুয়েন্টিকে আমি আসল ক্রিকেট বলতে রাজি নই। টেস্ট ক্রিকেট ক্রমশঃ দুর্লভ হয়ে নিত্য নতুন ফর্মেটের যে ক্রিকেট শুরু হয়েছে সেখানে রং আছে জৌলুশ আছে চমক আছে কিন্তু ক্রিকেট নেই। যে দিন কপিল দেবের রেকর্ড ভেঙ্গে কোর্টনি ওয়ালশ অবসরে চলে গেলেন সেদিনই ক্রিকেটের রংধনু থেকে একটি রং খসে পড়ল।এর পর একে একে কার্টলি এ্যামব্রোস,কার্ল হুপার,জিমি এ্যাডামসরা খসে গেলেন।ক্রিকেট একটু একটু করে রং হারাতে থাকল। ওয়াকার-ওয়াসিম চলে যাওয়ার পর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি রং অবশিষ্ট!গত বিশ্বকাপে উইন্ডিজ কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনায় যখন ব্রায়ান চার্লস লারা হঠাৎ অবসরের ঘোষণা দিয়ে বসলেন তখন ক্রিকেট যেন বাই কালারের ফটোগ্রাফ হয়ে উঠল!

শেষ দিকে এসে ক্রিকেট বিশ্বের মাত্র তিনটি ছবিতে মন আটকে থাকত...সৌরভ শচীন আর লারার ব্যাটিং,এবং ওয়াসিম ডোনাল্ড আর ম্যাকগ্রার বোলিং। লারা চলে যাওয়ার পর অনেক দিন ক্রিকেট দেখাই প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলাম।মনে পড়ে যেদিন রাতে লারার অবসরের কথা শুনলাম সেদিন অমিতকে (বর্তমানে সমকালের চিফ নিউজ এডিটর)ফোন করেছিলাম! রাত তখন আড়াইটা-তিনটা হবে! পনের-বিশ মিনিট কথা বলার পর দেখা গেল দুজনই কাঁদছি! সেদিনই প্রথম আবিষ্কার করলাম,এই কালো মানুষটিকে কতটা ভালবাসতাম! আজ সৌরভের বিদায়ের পর মনে হচ্ছে ক্রিকেট তার শেষ রং টুকুও হারাল! ক্রিকেট যেন রংহীন ফ্যাকাসে এক এপিসোর্ড হয়ে গেল!

যখন ক্রিকেট লিখতাম তখন সম্ভবত এই সৌরভকে নিয়ে আমার ৪০/৪৫টা আলাদা পোস্ট ছিল। ওকে নিয়ে গ্রেগ চ্যাপেলের শয়তানীর বিরুদ্ধে এই দেশে বসেও প্রবল প্রতিবাদে লিখতে থাকতাম।মনে পড়ে বাংলাদেশের উদ্বোধনী টেস্ট ম্যাচে গলায় কার্ড ঝুলিয়ে ষ্টেডিয়ামে হাজির হয়েছিলাম।সাধারণত আমি মাঠে খেলা দেখার পক্ষপাতি নই। ওই দিন শুধু সৌরভকে দেখতে এবং কথা বলতে গিয়েছিলাম।আর একবার কথা বলেছিলাম কোলকাতার প্রখ্যাত ক্রিকেট লিখিয়ে গৌতম ঘোষের ফোনে। সৌরভ গৌতমকে দেয়া স্বাক্ষাৎকারে গৌতম প্রশ্ন করেছিল-‘মানুষ সৌরভ কি কোলকাতার সামাজিক খোঁজ-খবর রাখে’? উত্তরে ও বলেছিল-‘না, আমি ক্রিকেটার না হলেও রাখতাম না’! কথাটা শুনতে খুব খারাপ লেগেছিল। পরে গৌতমের ফোনে হেসে দিয়ে বলেছিল-‘আপনারা ভিন দেশে বসেও এটা খেয়াল করেছেন? সরি দাদা, আসলেই ওভাবে বলাটা ঠিক হয়নি'’।তার পর আর কোন দিন কথা হয়নি।শুধু একবার ওই গৌতমের মাধ্যমেই ওকে বলতে বলেছিলাম-ও কিছুতেই শর্টপিচ কে হুক করতে পারছে না,টপএজ হয়ে শর্টলেগে ক্যাচ উঠে যাচ্ছে, ওকে চেস্টগার্ড ফেলে দিতে বলো,ব্যাকফুটে এসে সম্পূর্ণ শরীর যদি ঘোরাতে না পারে তাহলে যেন হুক করতে না যায়।

টিমমেটরা বলত- অফ সাইডে ঈশ্বরের পর সবচেয়ে ভাল শর্ট নেয় দাদা।বিশেষত বিশ্বে যারাই বা-হাতি তাদেরই ব্যাটিং শৈলী ছবির মত। চোখ চেয়ে দেখার মত। জেফ বয়কট একারণেই ওকে নাম দিয়েছিল-‘প্রিন্স অব ক্যালকুট্টা’! এই প্রজন্মে মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যানই অমন রূপশৈলীময় ব্যাট করত।ডেভিড গাওয়ার,ব্রায়ান লারা আর সৌরভ। হায় ! সেই ক্রিকেটের শেষ বরপুত্রও চলে গেলেন!

সৌরভের বর্নাঢ্য ক্যারিয়ারের সবটুকু তুলে দেয়া যাবে না এই পরিসরে। শুধু এটুকুই বলা যায়ঃ টেস্টে ১১৩ ম্যাচে ৭২১২ রান,সর্বোচ্চ ২৩৯, সেঞ্চুরী ১৬,অর্ধশতক ৩৫ । আর বোলার হিসেবে ৯৯ ইনিংসে ১৬৮১ রানে ৩২ উইকেট।ওয়ানডে তে ৩১১ ম্যাচে ১১৩৬৩ রান। সর্বোচ্চ ১৮৩(এই স্কোরটা সহজেই ডবলসেঞ্চুরী হতে পারত,হয়নি অজয় জাদেজার হারামিপনার জন্য) সেঞ্চুরী ২২ আর অর্ধশতক ৭২। গড় ৪১.০২, টেস্ট গড়-৪২.১৭। ওয়ানডে বোলার হিসেবে ৩১১ ম্যাচে গুণে গুণে ১০০ উইকেট।বেষ্ট বোলিং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টরেন্টোতে ১৬ রানে ৫ উইকেট।

সৌরভ কোন জাতের নেতা? ২০০৪ সাল।অস্ট্রেলিয়া সফরে সৌরভের নেতৃত্বাধীন ভারত। সারা দুনিয়া তখন হিসাব কষছে স্টিভদের আক্রোশের আগুনে পুড়বেন সৌরভ। ২০০১ সালের লজ্জা নিবারণের জন্য ঘরের মাঠে ভারতের ওপর গুলি খাওয়া বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে বিশ্বজয়ীরা। কিন্তু বোদ্ধাদের সব হিসাব পাল্টে দিলেন সৌরভ। চার টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে ব্রিসবেনে ব্যাট করতে নেমেই ১৪৪ রানের ইনিংস খেললেন সৌরভ। বলা বাহুল্য, প্রথম ইনিংসে ভারতের একমাত্র সেঞ্চুরি এটা। এক সেঞ্চুরির কাছেই শেষ হয়ে গেল বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সব জারিজুরি কারিকুরি। ব্রিসবেনে হারল অস্ট্রেলিয়া। সৌরভ-টনিকে উদ্দীপ্ত ভারতের বিপক্ষে পুরো সিরিজেই আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। এটা ছিল আবার স্টিভ ওয়াহর বিদায়ী সিরিজ। জীবনের শেষ সিরিজে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে স্টিভ ওয়াহকে। সিডনিতে জীবনের শেষ ইনিংসে ম্যাচে হারের লজ্জা এড়ানোর জন্য দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করতে হয়েছে স্টিভ ওয়াহকে।অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা পাকিস্তানের মাটিতে ভারতীয় পেসাররা আজ যে সমানতালে লড়াই করার সাহস দেখাচ্ছে সবকিছুর মতো সেটার শুরুও করতে হয়েছিল সৌরভকেই।

গতকাল নাগপুরে সৌরভের বিদায় নিয়ে আবেগাপ্লুত ভাষায় ভারতের ব্যাটিং বিস্ময় শচীন টেন্ডুলকার বললেন, ‘আমরা সবাই দাদাকে ভীষণ মিস করব।’ সারা দুনিয়া মিস করবে ত্রিকেটার সৌরভকে। আর আমরা মানে বাঙালিরা অনুভব করব বিশ্বজয়ী বাঙালির অভাব। ঢাকায় ত্রিকেট খেলতে এসে আর কোনো ত্রিকেটার বলবে না 'দাদা, এখনো ইলিশ খাওয়া হলো না।' এই সৌরভ যে একান্তই আমাদের। তাই সৌরভের বিদায়ে আর চোখের জল গলায় বাষ্পনয়।

বিদায় বেলা বন্ধু নাজমুল হক তপন এর লাইনটা দিয়েই শেষ করছি..... নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে লেখা চিঠিতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, 'বীরকে ভগবান ভালোবাসে আর ভগবানকে মানুষ পুজো দেয়। তুমি বীর আর আমি মানুষ।' সেই কথাকে শ্রেয় জ্ঞান করে কোটি কোটি বাঙালির পক্ষ থেকে বলছি 'বিশ্ববিজয়ী বাঙালি তোমাকে স্যালুট।'

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): বিদায় সৌরভ ;
প্রকাশ করা হয়েছে: এলেবেলেস্মৃতিকথা  বিভাগে । সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১০ রাত ৩:৫১



  • ৪০ টি মন্তব্য
  • ৩৬৫ বার পঠিত,
পোস্টটি ১৪ জনের ভাল লেগেছে
১. ১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৪২
১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৪৩
লেখক বলেছেন: এটা কোন ব্যাপার না। বুঝতে হবে ভিক্টরিষ্ট্যান্ডে সৌরভ ভারতের রিপ্রেজেন্ট করছেন,প.বাঙলার নন।যদ্দুর জানি শেখ হাসিনার সাথে সৌরভ বাঙলাতেই কথা বলেছিল।আমিও বাঙলাতেই বলেছিলাম।


২. ১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৪২
এ. এস. এম. রাহাত খান বলেছেন: দাদা কে মিস করব খুব বেশি।দাদা র মাঝে একটা স্পিরিট ছিল,যা খুব টানত আমাকে।
দাদা মাঠে না নামলেও আমরা তোমাকে ভুলে যাবনা...

+

১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৪৬
লেখক বলেছেন: আমার ব্যক্তিগত মত এখন পর্যন্ত সর্বশ্রেষ্ঠ অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ। তার সাথে পারসোনালিটি ক্লাশে সৌরভ সমানে সমান লড়েছিল।টু গ্রেট ওয়ারিয়র।


৩. ১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৪৫
এ. এস. এম. রাহাত খান বলেছেন: @ বিডি পা ধরা ধরি...এসব না বলে অন্যভাবেও কথা বলা যায়।দেশ কে অসম্মান না করলেই কি নয়?

আর দাদা বাংলা বলাতে সব সময় ভালো বাসেন।সেটা উনি অনেক বার সাক্ষাত কারে বলেছেন।

১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:০৬
লেখক বলেছেন: ভাল বলেছেন।ধন্যবাদ।


১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:২১
লেখক বলেছেন: শালারা ষড়যন্ত্র কইরা পোলাডার দুই বছর ক্যারিয়ার কমাইয়া দিল!


৫. ১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৪৭
বিডি আইডল বলেছেন: এ. এস. এম. রাহাত খান বলেছেন: @ বিডি পা ধরা ধরি...এসব না বলে অন্যভাবেও কথা বলা যায়।দেশ কে অসম্মান না করলেই কি নয়?

ঘটনাটা তাই ঘটেছিল। দেখেছিলাম বলেই বলছি...দেশকে অসম্মানের কোন প্রশ্ন এখানে নেই।

বাংলার দাদার মুখ থেকে সবাই পুরস্কার বিতরণের সময় এক-দুটো বাংলা শব্দ শুনতে চেয়েছিল...আপসুস।

১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:২৬
লেখক বলেছেন:
=p~


৬. ১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৫১
শওকত হোসেন মাসুম বলেছেন: আসলেই ক্রিকেট দেখার মজাটাই চলে যাচ্ছে।
(অফটপিক-আপনি কি নিউইয়র্কের মনজু ভাই, ভোরের কাগজে ছিলেন যিনি)।

১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:২৪
লেখক বলেছেন:
ক্রিকেটের মজা চলে যাচ্ছে না, অলরেডি গেছে।
ভোরের কাগজের মনজু ভাই ঠিক আছে, কিন্তু কখনো নিউইয়র্কে তো ছিলাম না !


৭. ১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৫৪
সুমন সালেহী বলেছেন: পুরো লেখাটা না পড়েই একটি মন্তব্য করছি....ভারতীয় ক্রিকেটে টেন্ডুলকারের চেয়ে সৌরভের অবদান বেশি...টেন্ডুলকার দ্রাবিড় তাদের নিজেদের রেকর্ডের জন্য খেলে ভারতকে হারিয়ে দিয়েছে....সৌরভ ভাল খেলেছে কিন্তু ভারত হেরেছে এমন হয়েছে খুব কম......

১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:৪৩
লেখক বলেছেন: ঠিক বলেছেন। সৌরভ ছিল আনসাঙ হিরো।


৮. ১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৫৫
বিষাক্ত মানুষ বলেছেন: ভাল্লাগছে লেখাটা । সৌরভের নাক উঁচা স্বভাব আছে কিছুটা। তবে সৌরভের অফ সাইডের শটগুলো সারাজীবন চোখে ভাসবে

১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:৪৮
লেখক বলেছেন:
সিলি মিডঅফ,কাভার,এক্সট্রাকাভার,সর্ট এক্সট্টাকাভার, পয়েন্ট,ডীপ মিডঅফ,লংঅফ.....অফ সাইডের এতগুলো ফিল্ডারের ফাঁক গলে কি অসাধারণ ভঙ্গিতে বল সীমানার বাইরে.....


৯. ১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৫৯
রাঙা মীয়া বলেছেন: স্পিনের বিপক্ষে আগ্রাসী শটগুলো চিরকাল মনে থাকবে। লড়াকু মনোভাবের জন্যই একজন গ্রেট খেলোয়াড় হয়েছিলো।

১২ ই নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৫৫
লেখক বলেছেন: এই শর্টটা ছয় বার মারলে পাঁচ বারই বাউন্ডারি অথবা ওভার বাউন্ডারি....


১২ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১:৫২
লেখক বলেছেন: দ্য গ্রেট ওয়ারিয়র অব বেঙ্গল।


১২. ১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৩৪
নাঈম বলেছেন: দাদার সমগ্র ক্রিকেট জীবনের আমি একজন চরম ভক্ত, সেটা তিনি একজন বাঙ্গালী বলে নয়, তাঁর লড়াকু মনোভাবটা অন্য সব ভারতীয় অধিনায়কের চেয়ে তাঁকে অনন্য করে রেখেছিল।


আপনার পোষ্টটি পড়ে খুবই ভাল লাগলো। তবে ছোট্ট একটি অসঙ্গতি ধরিয়ে দেয়ার ধৃষ্টতা করছি: ২০০৩-০৪ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রথম টেস্টটি ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এটা আপনি ঠিকই বলেছেন, ঐ টেস্টে দাদা ১৪৪ করেছিলেন, এটাও সঠিক তথ্য, তবে আপনি যে বলেছেন, সেই ব্রিসবেন টেস্টে অস্ট্রেলিয়া হেরেছিল, কথাটি সঠিক নয়। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই ব্রিসবেন টেস্টটি ড্র হয়েছিল।

সেই ম্যাচের স্কোরকার্ড

১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৪০
লেখক বলেছেন: রাইট! এ্যাডিলেডে জিতেছিল? দ্বিতীয় টেস্টে? থ্যাংকস নাঈম।


১৩. ১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৪৪
১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৫০
লেখক বলেছেন: আমার ধারণা শেষ টেস্টটাও ভারত জিততে পারত। কর্পোরেট স্বার্থের জন্য পারেনি। অস্ট্রেলিয়াকে ফলোঅনে সুযোগ পেয়েও ফেলেনি। স্টিভ ম্যাচটা ড্র করে দেয়! কেসটা ছিল স্টিভ,লারা,সচীন তিন জনই এমআরএফ এর ব্রান্ড আ্যামবাসেডর। কোন এক গোপন ইশারায় ড্র করতে দিয়ে স্টিভের বিদায় টেস্টটা স্মরণীয় করতে দেয়া হয়েছিল।


১৪. ১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৫১
মেহরাব শাহরিয়ার বলেছেন: ভারতের ক্যাপ্টেন থাকাকালীন সময়ে সৌরভ বেশ স্নবিশ ছিলেন , তারপরও প্রিয় ক্রিকেটারের তালিকায় সে থাকবেই ।

আজহারউদ্দিন আর সৌরভ .......ভারতীয় এই দুই ক্রিকেটার সম্ভবত তাদের যোগ্য মর্যাদাটা পেলেন না

১২ ই নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৪৯
লেখক বলেছেন: হ্যাঁ।তবে এদের চেয়েও দুর্ভাগা সঞ্জয় মাঞ্জরেকার ! পাকিস্তানে ডেব্যু টেস্টে(১৯৮৮-৮৯) ২১৮ রানের এক মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেছিলেন। মাত্র ২৭ বছর বয়সেই তাকে 'অপাংতেয়' করে দেওয়া হয়েছিল !


১২ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১:৪৩
লেখক বলেছেন: ভাল থাকুক বঙ্গ সন্তান।


১২ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১:৪৯
লেখক বলেছেন: সব ইতিহাস হয়ে গেল...


১২ ই নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫০
লেখক বলেছেন: সৌরভ-লারা দুজনকেই মিস করি....


১২ ই নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫১
লেখক বলেছেন: হতাশা........


২০. ১২ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৪৫
২১. ১২ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১:৫৮
হিমালয়৭৭৭ বলেছেন: আমার কাছে সৌরভ গাঙ্গুলী মানেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে স্পিনারকে ছয় মারা এক শিল্পী ব্যাটসম্যান।। অফস্ট্যাম্পেও তার দক্ষতা অসাধারণ, তবুও আমার মনে হয় এই শটটি যেন সৌরভ গাঙ্গুলী ছাড়া আর কাউকেই মানায়না।।। এটা সত্যি তাকে নিয়ে ক্রিকেট বোর্ডে অনেক নোংরামি হয়েছে, এবং শচীন-দ্রাবিড় যতটা প্রশ্নাতীত সম্মান পেয়েছে, প্রশ্নাতীতভাবে সমসম্মানের দাবীদার হয়েও সে সেটা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, এই ব্যাপারটি খুবই পীড়াদায়ক।।।বর্তমানকালে ব্যাটসম্যানের যে আকাল পড়েছে তাতে শচীন-দ্রাবিড়-পন্টিং অবসর নিলে খেলা আর ক্রিকেট দেখবো কিনা সন্দেহ আছে।।
@সুমন সালেহী, তোমার বক্তব্যের সঙ্গে তীব্র দ্বিমত পোষণ করছি....শচীন-দ্রাবিড়-সৌরভ এরা ক্রিকেটের মহীরূহ.......ইন্ডিয়ান নির্বাচক-সমালোচকরা বিভাজন করুক, আমাদের সেই বিভাজন না করাই উচিৎ।।।

২২. ১২ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:৩৮
২৩. ১৩ ই নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৫৬ হাইগ্যানী হাবাজন ব্যবিলন বলেছেন: অপরের লাগিয়া আর কান্দিয়া আর কী হইবে ভাইগনা? নিজের ভাবনায় কান্দা জরুরী এমতাবস্থায়।