“লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির আলবেনিয়া সফর করছিলেন। তিরানায় কয়েকজন তরুণের সঙ্গে তার কথা হচ্ছিল, যারা অবজ্ঞা-অবহেলায় এনভার হোক্সার নয়া আলবেনিয়াকে নিয়ে তামাশা করছিল। কেন তিরানা রোম, এথেন্স বা ভিয়েনার মতো জৌলুস-জাঁকে পরিপূর্ণ নয় তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। স্পষ্টতই রোম, এথেন্স, প্যারিসের সঙ্গে ছুটতে চাইছিল ওরা। শাহরিয়ার বলেছিলেন, অর্জন তো করোনি, জন্মসূত্রে যা পেয়েছো হেলায় ধ্বংস করো না। জন্ম-জন্মান্তরেও ফিরে পাবে না, (হুবহু উদ্ধৃত নয়)।”
তিনি যখন তিরানার তরুণদের সতর্ক করছিলেন তারও পনেরো বছর আগে আমাদের তরুণ প্রজন্ম তাদের যুদ্ধে পাওয়া স্বাধীনতাকে, ছিনিয়ে আনা স্বদেশকে, রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধকে খুঁইয়ে বসেছে। আমার লেখালেখির সময়কালে অনেক বিষয়ে লিখেছি। কখনো মুক্তিযুদ্ধ-বিজয়-স্বাধীনতা নিয়ে লিখিনি। লিখতে পারিনি। চোখের সামনে প্রিয় মানুষটি পুড়ে অঙ্গার হলে যে অনুভূতি হয় তা-ই হয়েছিল এখনো হয়। অসহ্য যন্ত্রণা আর ভয়ঙ্করতম ব্যর্থতায় কখনোই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখিনি। একসঙ্গে হাজার হাজার লেখা কলমের ডগা দিয়ে বেরুতে গিয়ে জট পাকিয়ে গেছে। অসভ্য ক্ষোভে বধির হয়ে গেছি যেন। ৩১টি বছর ধরে কানের ভেতর একধরনের ভোঁতা ভোঁ ভোঁ শব্দ বেজেছে। গুমরে ওঠা হতাশা, ব্যর্থতা, লজ্জা, অপারগতা দলা পাকিয়ে গলার কাছটিতে উঠে এসেছে। এ যেন চেয়ে চেয়ে মহাদেশ ডুবতে থাকার জান্তব দৃশ্যাবলির বায়োস্কোপ। বন্ধুবর কামালউদ্দিন কবির বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখতে বলে ক্ষতের ওপরকার পাতলা পলেস্তারা খোঁচা দিয়ে তুলে দিলেন যেন। কাঁচা হয়ে যাওয়া ওই ক্ষত এখন দগদগে।
কী লিখবো? বাঙালির পরাজয়ের ইতিহাস? সাধের ছোট্ট ৫৬ হাজার বর্গমাইলের অ্যাকুরিয়ামের ভেঙে যাওয়ার ইতিহাস? বিজিতের রক্তচক্ষুর সামনে বসে স্বাধীনতার নামতা পড়ার ইতিহাস? নাকি সেই হতভাগাদের কাসুন্দি, যারা বৈষম্য দেখেছে, সংগ্রাম দেখেছে, যুদ্ধ দেখেছে, সর্বগ্রাসী অত্যাচার দেখেছে, স্বাধীনতা দেখেছে। আবার চোখের পলকে বিজয়-স্বাধীনতা লুট হতে দেখেছে? স্পষ্টতই অনুভব করি, আমরা সেই ক্রান্তিকালের মানুষ, যারা ইতিহাসের চৌর্যবৃত্তিতে নিঃস্ব, অথচ আঁকড়ে ধরে রেখেছি পোঁড়া ভিটের পোঁড়া খুঁটির শেষাংশ।
এই জনপদের বাঙালিরা সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র জাতি, যারা ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মাত্র তিন/চার বছরেই শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। যুদ্ধের সহায়ক কে নিয়ে তামাশা করেছে। যুদ্ধের নেতার নেতৃত্ব নিয়ে সন্দেহ করেছে। অবিশ্বাস করেছে। একসময় সন্দেহগুলো পাকাপোক্ত হয়ে সিদ্ধান্তে দাঁড়িয়ে গেছে। এই জাতি তার বীরাঙ্গনাদের নিয়ে অশীল মস্করা করেছে। নয় মাসের যুদ্ধকে চাপিয়ে দেওয়া বলেছে। পবিত্র ভূমি (!) পাকিস্তান ভাঙার জন্য ভারতকে শত্রু বলে কাঠগড়ায় তুলেছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের ষড়যন্ত্র বলেছে। শেখ মুজিবকে ‘২৫ মার্চের স্কেপিস্ট’ বলেছে। ‘পলায়নপর সুবিধাবাদী' বলেছে। পরে ভর্ৎসনা করেছে। জাতির পিতা বিষয়ে বেশুমার মস্করা করেছে। চারপাশের বর্ণচোরাদের অনুগুণ্ঠন খুলে গেছে। একসময় মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাকে সপরিবারে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া স্বদেশ কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুঁকছে। অতঃপর নতুন প্রজন্ম বলতে শুরু করেছে, ‘গন্ডোগোলের বছর’। নতুন প্রজন্ম একাত্তরের সেই আত্মবলিদানকে বলেছে, গেঁয়ো কিছু মানুষের আহম্মকি!
আমার খুব হাসি পায়, যখন দেখি আমাদের বিদ্বোৎজনরা বলেন, এদেশের নব্বই-পঁচানব্বই ভাগ মানুষই সে সময়ে স্বাধীনতার জন্য লড়েছিল, পক্ষে ছিল। সবাই কোনো না কোনোভাবে যুদ্ধের ভেতরেই ছিল! হাসি পায়। দুঃখবোধ করি। আমার সরল যুক্তি দিয়ে বুঝি, তা-ই যদি হতো তাহলে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় মুক্তিযুদ্ধের স্থপতিকে হত্যা করতাম না। চার বছরের মাথায় মুক্তিযুদ্ধের বিভীষণরা ক্ষমতা দখলের রক্তয়ী হত্যালীলায় মত্ত হতো না। পাঁচ বছরের মাথায় পরাজিত রাজাকার-আলবদররা দাঁপিয়ে বেড়াতো না। এক দশকের মাথায় মোটা দাগে জাতিটা দ্বিখণ্ডিত হতো না। দেড় দশকের মাথায় ‘মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম’ বলতে লজ্জা পেতো না। দুই দশকের মাথায় মুক্তিযুদ্ধের কাঠের পুতুলকে প্রাণ সঞ্চার করে ‘ডামি মহানায়ক’ বানাতো না। আড়াই দশকের মাথায় মুক্তিযুদ্ধকে ‘পুরোনো প্যাঁচাল’ বলে আঁস্তাবলে ছুড়ে ফেলা হতো না। তিন দশকের মাথায় সরাসরি রাজাকার-আলবদররা তখতে তাউসে বসে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা, সেক্যুলারিজম, আর লাখ রাখ নরনারীর আত্মত্যাগের পশ্চাৎদ্দেশে লাথি মেরে ইতিহাস ভুলিয়ে দিতো না।
আমি বিশ্বাস করি যারা সে সময়ে কোলাবরেটর হতে পেরেছে তারা দেশে নিরাপদ থাকতে পেরেছে। আপোস করে থেকেছে, (শিক্ষিতজনদের কথা বলছি) যারা মরতে মরতে অবশিষ্টটুকু ভারতে পালিয়েছে, তারা যুদ্ধ করেছে। যারা প্রাণকে তুচ্ছ করতে শিখেছে, তারা যোদ্ধা হতে ভারতে গেছে। পালিয়ে পালিয়ে দেশের ভেতর যুদ্ধ করেছে। যারা বুদ্ধিমান তারা মরতে চায়নি। আবেগকে বশ করে বাস্তবজ্ঞান সম্পন্ন হয়েছে। তারা দেশে থেকে কোলাবরেটর হয়েছে। দালাল হয়েছে। দালালরা ক্ষমতা দখল করার পর দালাল থেকে ‘মানুষ’ হয়েছে। সেই মানুষেরা এখন ক্ষমতার আগাপাশতলা আলোকিত করে ইতিহাস নির্মাণ করছেন। বিকৃত, খণ্ডিত, ভগ্ন, পরিত্যাক্ত বেজন্মা ইতিহাস। এ জাতির সিংহভাগকেই আমি দালাল বলছি, কোলাবরেটর বলছি, বেজন্মা বলছি। কারণ তারা জন্ম ইতিহাসকে সন্দেহ করেছে, অবিশ্বাস করেছে, পরিত্যাগ করেছে। প্রতিবাদ করেনি। প্রতিরোধ করেনি। আর সে কারণেই তিরিশ লাখ শহীদের সঙ্গে এই জাতি বেঈমানি করেছে। আর তাই কমবেশি প্রতিটি শিক্ষিত বাঙালিই কখনো কখনো এক একটি আঁস্ত স্কাউন্ড্রেল। ইতিহাসের বর্জ্য।
মেহেরপুর-বেতাই সীমান্তে আমি দেখেছি, সেই ১১ বছর বয়সে দেখেছি, বাঙ্কারে বাঙ্কারে দেখেছি এক একটি টিমে ২০ জন সাধারণ মানুষের সঙ্গে একজন বিডিআর (তৎকালীন ইপিআর)। ২৫/৩০ জন সাধারণের সঙ্গে একজন সেনা সদস্য। ৯০/১০০ জন মুক্তিযোদ্ধার নেতৃত্বে একজন ক্যাপটেন বা লেফটেন্যান্ট। আমি দেখেছি ফ্রন্ট লাইনের একেবারে সামনে কাছা দেওয়া কৃষকের ছেলে। পরের ব্যাকআপে কলেজ পড়ুয়ারা। তারও পেছনে সেনা-ইপিআর বা আর্মড ফোর্স। এবং এদের সবাইকে ব্যাকআপ দিচ্ছে আর্টিলারি নিয়ে ভারতীয় সেনা। আনুপাতিক হিসাবে হাজার বিশেক বাঙালি সেনা/ইপিআর/পুলিশদের সঙ্গে সম্মুখ আর গেরিলা মিলিয়ে লাখ দুয়েক মুক্তিযোদ্ধা। গড় করলে ২.০০ = ০.০০২০! এখন দেশ-সমাজ-ক্ষমতা-ইতিহাস বেদখল হওয়ার পর শুনছি, দেশ স্বাধীন করেছে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী! ব্রাভো!!
চতুর্দশ শতক থেকে উনবিংশ শতক জুড়ে ল্যাটিন আমেরিকার দেশে দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। ইনকা সভ্যতার ধারক ইন্ডিয়ানরা যুদ্ধ করেছে স্প্যানিশদের বিরুদ্ধে, ইংরেজদের বিরুদ্ধে, ফরাসি আর পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে। পুরোটা উনবিংশ এবং বিংশ শতক জুড়ে কালো আফ্রিকানরা সাদা ইউরোপীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। মাতৃভূমিকে মুক্ত করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগুনে পুড়ে পূর্ব ইউরোপীয়রা পুঁজিবাদ আর সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে। বিংশ শতকের মাঝামাঝি এশিয়া-পূর্ব এশিয়ার দেশে দেশে মুক্তিযুদ্ধ সগৌরবে জয়ী হয়েছে। ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, ইতালি, পর্তুগালের নিগড় থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। এইসব একএকটি সংগ্রাম, একএকটি যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে স্বাধীনচেতা মানুষ তৈরি করেছে। আত্মমর্যাদাশীল জাতি তৈরি করেছে। এরা কেউ, হ্যাঁ এরা কেউই তাদের জন্মইতিহাস কলঙ্কিত করেনি। সন্দেহ করেনি। অস্বীকার করেনি। বেজন্মার মতো জন্ম নিয়ে তামাশা করেনি। কিন্তু এই বাংলা করেছে। এই বাঙালি করেছে। আর সে কারণেই এই বাঙালিকে তার সূর্যসন্তানদের আত্মবলিদানকে শ্রদ্ধা করার জন্য নতুন প্রজন্মকে করজোড়ে অনুরোধ করতে হয়! কখনো বা আইনি তকমা দিতে হয়। মনে করিয়ে দিতে হয়, তাদের পূর্বপুরুষরা একদা অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল। কষ্ট চেপে মনে করাতে হয় তাদের পূর্বপুরুষদের অকাতরে প্রাণদানের বেদিতেই আজ অবশিষ্টদের কতল করা হচ্ছে। তা না হলে নতুনরা বিস্মৃত হয়। দূরবীন দিয়ে চেনাতে হয়, দেখো এ নয় ও যুদ্ধ করেছিল। এ নয় ওর নেতৃত্বে যুদ্ধ হয়েছিল।
এখন আমরা স্টুপিড-স্কাউন্ড্রেল মেনে নেয়ার দলরা যে রেজিমে বাস করছি তারা কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। যৌবনের তরঙ্গে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েছিল মাত্র। কারণ কোনো মুক্তিযোদ্ধা তার জন্ম জঠোরকে অস্বীকার করতে পারে না। আমাদের ‘ভেদবুদ্ধিহীন বোকা আত্মবলিদানকারী মুক্তিযোদ্ধারা’ আমাদেরকে একটা স্বাধীন ভূখণ্ড দিয়েছিল। সেই ভূখণ্ডে এখন যারা শাসন করছেন, হোক না তার নাম জিয়া-এরশাদ-নিজামী-ফখরুদ্দীন.. এরা কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। হয়তো যুদ্ধ করেছে মাত্র সেনার চাকরির নিয়মে (সেনাকে বেতন-ভাতা দেওয়াই হয় যুদ্ধ করার জন্য)। এরা বাংলাদেশটাকে জন্মইতিহাসহীন ‘জারজ’ বানিয়েছে। সেই জারজত্বকে স্থায়ী করার জন্য একের পর এক প্রজন্ম বানিয়েছে। তারা আধুনিক। স্পার্ম আর ডিম্বাণুর জায়গট ফরমেশন বোঝে না। শুধু বোঝে কম্মটি টেস্ট টিউবেও হয়। এই আধুনিক প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ মানে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। লাখ লাখ কৃষক-শ্রমিকের সন্তানদের আত্মত্যাগ মানে, অ্যামেচার ডিজাস্টার। আমি জন্মজন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী নই, হলে বলতাম, হে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সূর্যসন্তানরা পরজন্মের সময় এসেছে। উঠে এসে আমাদের অপবিত্র পাপবিদ্ধ সর্বশরীরে থু থু দিয়ে যাও, আমরা স্বাধীনতা ‘ভোগ’ করছি বেজন্মা ইতরের মতো, দাম না চুকিয়েই।
২০০৪ সালে বিজয় দিবস উপলক্ষে লেখা।
তিনি যখন তিরানার তরুণদের সতর্ক করছিলেন তারও পনেরো বছর আগে আমাদের তরুণ প্রজন্ম তাদের যুদ্ধে পাওয়া স্বাধীনতাকে, ছিনিয়ে আনা স্বদেশকে, রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধকে খুঁইয়ে বসেছে। আমার লেখালেখির সময়কালে অনেক বিষয়ে লিখেছি। কখনো মুক্তিযুদ্ধ-বিজয়-স্বাধীনতা নিয়ে লিখিনি। লিখতে পারিনি। চোখের সামনে প্রিয় মানুষটি পুড়ে অঙ্গার হলে যে অনুভূতি হয় তা-ই হয়েছিল এখনো হয়। অসহ্য যন্ত্রণা আর ভয়ঙ্করতম ব্যর্থতায় কখনোই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখিনি। একসঙ্গে হাজার হাজার লেখা কলমের ডগা দিয়ে বেরুতে গিয়ে জট পাকিয়ে গেছে। অসভ্য ক্ষোভে বধির হয়ে গেছি যেন। ৩১টি বছর ধরে কানের ভেতর একধরনের ভোঁতা ভোঁ ভোঁ শব্দ বেজেছে। গুমরে ওঠা হতাশা, ব্যর্থতা, লজ্জা, অপারগতা দলা পাকিয়ে গলার কাছটিতে উঠে এসেছে। এ যেন চেয়ে চেয়ে মহাদেশ ডুবতে থাকার জান্তব দৃশ্যাবলির বায়োস্কোপ। বন্ধুবর কামালউদ্দিন কবির বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখতে বলে ক্ষতের ওপরকার পাতলা পলেস্তারা খোঁচা দিয়ে তুলে দিলেন যেন। কাঁচা হয়ে যাওয়া ওই ক্ষত এখন দগদগে।
কী লিখবো? বাঙালির পরাজয়ের ইতিহাস? সাধের ছোট্ট ৫৬ হাজার বর্গমাইলের অ্যাকুরিয়ামের ভেঙে যাওয়ার ইতিহাস? বিজিতের রক্তচক্ষুর সামনে বসে স্বাধীনতার নামতা পড়ার ইতিহাস? নাকি সেই হতভাগাদের কাসুন্দি, যারা বৈষম্য দেখেছে, সংগ্রাম দেখেছে, যুদ্ধ দেখেছে, সর্বগ্রাসী অত্যাচার দেখেছে, স্বাধীনতা দেখেছে। আবার চোখের পলকে বিজয়-স্বাধীনতা লুট হতে দেখেছে? স্পষ্টতই অনুভব করি, আমরা সেই ক্রান্তিকালের মানুষ, যারা ইতিহাসের চৌর্যবৃত্তিতে নিঃস্ব, অথচ আঁকড়ে ধরে রেখেছি পোঁড়া ভিটের পোঁড়া খুঁটির শেষাংশ।
এই জনপদের বাঙালিরা সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র জাতি, যারা ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মাত্র তিন/চার বছরেই শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। যুদ্ধের সহায়ক কে নিয়ে তামাশা করেছে। যুদ্ধের নেতার নেতৃত্ব নিয়ে সন্দেহ করেছে। অবিশ্বাস করেছে। একসময় সন্দেহগুলো পাকাপোক্ত হয়ে সিদ্ধান্তে দাঁড়িয়ে গেছে। এই জাতি তার বীরাঙ্গনাদের নিয়ে অশীল মস্করা করেছে। নয় মাসের যুদ্ধকে চাপিয়ে দেওয়া বলেছে। পবিত্র ভূমি (!) পাকিস্তান ভাঙার জন্য ভারতকে শত্রু বলে কাঠগড়ায় তুলেছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের ষড়যন্ত্র বলেছে। শেখ মুজিবকে ‘২৫ মার্চের স্কেপিস্ট’ বলেছে। ‘পলায়নপর সুবিধাবাদী' বলেছে। পরে ভর্ৎসনা করেছে। জাতির পিতা বিষয়ে বেশুমার মস্করা করেছে। চারপাশের বর্ণচোরাদের অনুগুণ্ঠন খুলে গেছে। একসময় মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাকে সপরিবারে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া স্বদেশ কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুঁকছে। অতঃপর নতুন প্রজন্ম বলতে শুরু করেছে, ‘গন্ডোগোলের বছর’। নতুন প্রজন্ম একাত্তরের সেই আত্মবলিদানকে বলেছে, গেঁয়ো কিছু মানুষের আহম্মকি!
আমার খুব হাসি পায়, যখন দেখি আমাদের বিদ্বোৎজনরা বলেন, এদেশের নব্বই-পঁচানব্বই ভাগ মানুষই সে সময়ে স্বাধীনতার জন্য লড়েছিল, পক্ষে ছিল। সবাই কোনো না কোনোভাবে যুদ্ধের ভেতরেই ছিল! হাসি পায়। দুঃখবোধ করি। আমার সরল যুক্তি দিয়ে বুঝি, তা-ই যদি হতো তাহলে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় মুক্তিযুদ্ধের স্থপতিকে হত্যা করতাম না। চার বছরের মাথায় মুক্তিযুদ্ধের বিভীষণরা ক্ষমতা দখলের রক্তয়ী হত্যালীলায় মত্ত হতো না। পাঁচ বছরের মাথায় পরাজিত রাজাকার-আলবদররা দাঁপিয়ে বেড়াতো না। এক দশকের মাথায় মোটা দাগে জাতিটা দ্বিখণ্ডিত হতো না। দেড় দশকের মাথায় ‘মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম’ বলতে লজ্জা পেতো না। দুই দশকের মাথায় মুক্তিযুদ্ধের কাঠের পুতুলকে প্রাণ সঞ্চার করে ‘ডামি মহানায়ক’ বানাতো না। আড়াই দশকের মাথায় মুক্তিযুদ্ধকে ‘পুরোনো প্যাঁচাল’ বলে আঁস্তাবলে ছুড়ে ফেলা হতো না। তিন দশকের মাথায় সরাসরি রাজাকার-আলবদররা তখতে তাউসে বসে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা, সেক্যুলারিজম, আর লাখ রাখ নরনারীর আত্মত্যাগের পশ্চাৎদ্দেশে লাথি মেরে ইতিহাস ভুলিয়ে দিতো না।
আমি বিশ্বাস করি যারা সে সময়ে কোলাবরেটর হতে পেরেছে তারা দেশে নিরাপদ থাকতে পেরেছে। আপোস করে থেকেছে, (শিক্ষিতজনদের কথা বলছি) যারা মরতে মরতে অবশিষ্টটুকু ভারতে পালিয়েছে, তারা যুদ্ধ করেছে। যারা প্রাণকে তুচ্ছ করতে শিখেছে, তারা যোদ্ধা হতে ভারতে গেছে। পালিয়ে পালিয়ে দেশের ভেতর যুদ্ধ করেছে। যারা বুদ্ধিমান তারা মরতে চায়নি। আবেগকে বশ করে বাস্তবজ্ঞান সম্পন্ন হয়েছে। তারা দেশে থেকে কোলাবরেটর হয়েছে। দালাল হয়েছে। দালালরা ক্ষমতা দখল করার পর দালাল থেকে ‘মানুষ’ হয়েছে। সেই মানুষেরা এখন ক্ষমতার আগাপাশতলা আলোকিত করে ইতিহাস নির্মাণ করছেন। বিকৃত, খণ্ডিত, ভগ্ন, পরিত্যাক্ত বেজন্মা ইতিহাস। এ জাতির সিংহভাগকেই আমি দালাল বলছি, কোলাবরেটর বলছি, বেজন্মা বলছি। কারণ তারা জন্ম ইতিহাসকে সন্দেহ করেছে, অবিশ্বাস করেছে, পরিত্যাগ করেছে। প্রতিবাদ করেনি। প্রতিরোধ করেনি। আর সে কারণেই তিরিশ লাখ শহীদের সঙ্গে এই জাতি বেঈমানি করেছে। আর তাই কমবেশি প্রতিটি শিক্ষিত বাঙালিই কখনো কখনো এক একটি আঁস্ত স্কাউন্ড্রেল। ইতিহাসের বর্জ্য।
মেহেরপুর-বেতাই সীমান্তে আমি দেখেছি, সেই ১১ বছর বয়সে দেখেছি, বাঙ্কারে বাঙ্কারে দেখেছি এক একটি টিমে ২০ জন সাধারণ মানুষের সঙ্গে একজন বিডিআর (তৎকালীন ইপিআর)। ২৫/৩০ জন সাধারণের সঙ্গে একজন সেনা সদস্য। ৯০/১০০ জন মুক্তিযোদ্ধার নেতৃত্বে একজন ক্যাপটেন বা লেফটেন্যান্ট। আমি দেখেছি ফ্রন্ট লাইনের একেবারে সামনে কাছা দেওয়া কৃষকের ছেলে। পরের ব্যাকআপে কলেজ পড়ুয়ারা। তারও পেছনে সেনা-ইপিআর বা আর্মড ফোর্স। এবং এদের সবাইকে ব্যাকআপ দিচ্ছে আর্টিলারি নিয়ে ভারতীয় সেনা। আনুপাতিক হিসাবে হাজার বিশেক বাঙালি সেনা/ইপিআর/পুলিশদের সঙ্গে সম্মুখ আর গেরিলা মিলিয়ে লাখ দুয়েক মুক্তিযোদ্ধা। গড় করলে ২.০০ = ০.০০২০! এখন দেশ-সমাজ-ক্ষমতা-ইতিহাস বেদখল হওয়ার পর শুনছি, দেশ স্বাধীন করেছে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী! ব্রাভো!!
চতুর্দশ শতক থেকে উনবিংশ শতক জুড়ে ল্যাটিন আমেরিকার দেশে দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। ইনকা সভ্যতার ধারক ইন্ডিয়ানরা যুদ্ধ করেছে স্প্যানিশদের বিরুদ্ধে, ইংরেজদের বিরুদ্ধে, ফরাসি আর পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে। পুরোটা উনবিংশ এবং বিংশ শতক জুড়ে কালো আফ্রিকানরা সাদা ইউরোপীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। মাতৃভূমিকে মুক্ত করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগুনে পুড়ে পূর্ব ইউরোপীয়রা পুঁজিবাদ আর সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে। বিংশ শতকের মাঝামাঝি এশিয়া-পূর্ব এশিয়ার দেশে দেশে মুক্তিযুদ্ধ সগৌরবে জয়ী হয়েছে। ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, ইতালি, পর্তুগালের নিগড় থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। এইসব একএকটি সংগ্রাম, একএকটি যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে স্বাধীনচেতা মানুষ তৈরি করেছে। আত্মমর্যাদাশীল জাতি তৈরি করেছে। এরা কেউ, হ্যাঁ এরা কেউই তাদের জন্মইতিহাস কলঙ্কিত করেনি। সন্দেহ করেনি। অস্বীকার করেনি। বেজন্মার মতো জন্ম নিয়ে তামাশা করেনি। কিন্তু এই বাংলা করেছে। এই বাঙালি করেছে। আর সে কারণেই এই বাঙালিকে তার সূর্যসন্তানদের আত্মবলিদানকে শ্রদ্ধা করার জন্য নতুন প্রজন্মকে করজোড়ে অনুরোধ করতে হয়! কখনো বা আইনি তকমা দিতে হয়। মনে করিয়ে দিতে হয়, তাদের পূর্বপুরুষরা একদা অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল। কষ্ট চেপে মনে করাতে হয় তাদের পূর্বপুরুষদের অকাতরে প্রাণদানের বেদিতেই আজ অবশিষ্টদের কতল করা হচ্ছে। তা না হলে নতুনরা বিস্মৃত হয়। দূরবীন দিয়ে চেনাতে হয়, দেখো এ নয় ও যুদ্ধ করেছিল। এ নয় ওর নেতৃত্বে যুদ্ধ হয়েছিল।
এখন আমরা স্টুপিড-স্কাউন্ড্রেল মেনে নেয়ার দলরা যে রেজিমে বাস করছি তারা কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। যৌবনের তরঙ্গে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েছিল মাত্র। কারণ কোনো মুক্তিযোদ্ধা তার জন্ম জঠোরকে অস্বীকার করতে পারে না। আমাদের ‘ভেদবুদ্ধিহীন বোকা আত্মবলিদানকারী মুক্তিযোদ্ধারা’ আমাদেরকে একটা স্বাধীন ভূখণ্ড দিয়েছিল। সেই ভূখণ্ডে এখন যারা শাসন করছেন, হোক না তার নাম জিয়া-এরশাদ-নিজামী-ফখরুদ্দীন.. এরা কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। হয়তো যুদ্ধ করেছে মাত্র সেনার চাকরির নিয়মে (সেনাকে বেতন-ভাতা দেওয়াই হয় যুদ্ধ করার জন্য)। এরা বাংলাদেশটাকে জন্মইতিহাসহীন ‘জারজ’ বানিয়েছে। সেই জারজত্বকে স্থায়ী করার জন্য একের পর এক প্রজন্ম বানিয়েছে। তারা আধুনিক। স্পার্ম আর ডিম্বাণুর জায়গট ফরমেশন বোঝে না। শুধু বোঝে কম্মটি টেস্ট টিউবেও হয়। এই আধুনিক প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ মানে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। লাখ লাখ কৃষক-শ্রমিকের সন্তানদের আত্মত্যাগ মানে, অ্যামেচার ডিজাস্টার। আমি জন্মজন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী নই, হলে বলতাম, হে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সূর্যসন্তানরা পরজন্মের সময় এসেছে। উঠে এসে আমাদের অপবিত্র পাপবিদ্ধ সর্বশরীরে থু থু দিয়ে যাও, আমরা স্বাধীনতা ‘ভোগ’ করছি বেজন্মা ইতরের মতো, দাম না চুকিয়েই।
২০০৪ সালে বিজয় দিবস উপলক্ষে লেখা।
লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): মুক্তিযুদ্ধ। ;
প্রকাশ করা হয়েছে: সমসাময়ীক রাজনীতি বিভাগে । সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১০ রাত ৩:২০
প্রকাশ করা হয়েছে: সমসাময়ীক রাজনীতি বিভাগে । সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১০ রাত ৩:২০
১. ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:১৯
রাতমজুর বলেছেন: খুব বেশী দিন বাকি নেই, হয়তো আমার মেয়েই প্রশ্ন করবে," মুক্তিযুদ্ধটা কি?"
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৩১
লেখক বলেছেন: অলরেডি আমার মেয়ে প্রশ্ন করে বসেছে ! তার আরো একটা প্রশ্ন...' এই কথা উঠলে তোমরা গালাগালি কর কেন?'
অ.ট. এই সমস্যা নিয়েই সা.ইন কে জানিয়েছিলাম....ট্যাগে একটা শব্দ লিখছি, রিলিজের পর রিপিট হয়ে যাচ্ছে !
লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): মুক্তিযুদ্ধ।, মুক্তিযুদ্ধ। ;
অ.ট. এই সমস্যা নিয়েই সা.ইন কে জানিয়েছিলাম....ট্যাগে একটা শব্দ লিখছি, রিলিজের পর রিপিট হয়ে যাচ্ছে !
লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): মুক্তিযুদ্ধ।, মুক্তিযুদ্ধ। ;
২. ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:২২
ভরত নাট্যম বলেছেন: সুন্দর লেখা।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৪৬
লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩. ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৩০
একরামুল হক শামীম বলেছেন: কি আর বলবো!! বড় বিচিত্র সময় আমাদের!!
স্বাধীনতার চেতনা নিয়েও প্রশ্ন উঠে!!!!!
বাকি লেখাগুলোর জন্য অপেক্ষা করছি।
স্বাধীনতার চেতনা নিয়েও প্রশ্ন উঠে!!!!!
বাকি লেখাগুলোর জন্য অপেক্ষা করছি।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৫০
লেখক বলেছেন: একদিন সাংঘাতিক মূল্য দিতে হবে আমাদের এর জন্য।
৪. ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৩৩
জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: উদ্ধৃতি:
এই আধুনিক প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ মানে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। লাখ লাখ কৃষক-শ্রমিকের সন্তানদের আত্মত্যাগ মানে, অ্যামেচার ডিজাস্টার।
-ডিসেম্বরের দিকে( পরে জেনেছি।) মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা অপারেশনে যোগ দিতে দলে দলে পায়ে হেঁটে আসছেন। আমরা পলাতকদের দলে। দ্বিতীয়বারের মত মা-বাবার সঙ্গে ঢাকা থেকে পালাচ্ছি। দাউদকান্দি ফেরিঘাট পেরিয়ে, আমরা হাঁটছি পূর্ব দিকে। মুক্তিযোদ্ধারা হাঁটছেন পশ্চিম দিকে। ওঁদের দেখলেই আমরা ছোটরা (আমি বেবি ক্লাসের ছাত্র।) জয়বাংলা বলে চিৎকার করে উঠছি। তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন খালিগায়ে কিংবা গেঞ্জি, পরনে হাফপ্যান্ট, লুঙ্গি, কারো ফুলপ্যান্ট।
-এখন বড় হয়ে জানতে পারছি যে, সেই মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন "নিম্নবর্গের যোদ্ধা।" সামরিক অফিসাররা মুক্তিযুদ্ধের কৃতিত্ব তাঁদের দিতে চান না। সাধারণ (অসামরিক) যোদ্ধাদের কেউ বীর প্রতঅকের উপর খেতাব পেয়েছে বলে জানা নেই। সময়ের ধূলামাটিতে তাও দিনদিন আমি, আমরা ভুলতে বসেছি।
এই আধুনিক প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ মানে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। লাখ লাখ কৃষক-শ্রমিকের সন্তানদের আত্মত্যাগ মানে, অ্যামেচার ডিজাস্টার।
-ডিসেম্বরের দিকে( পরে জেনেছি।) মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা অপারেশনে যোগ দিতে দলে দলে পায়ে হেঁটে আসছেন। আমরা পলাতকদের দলে। দ্বিতীয়বারের মত মা-বাবার সঙ্গে ঢাকা থেকে পালাচ্ছি। দাউদকান্দি ফেরিঘাট পেরিয়ে, আমরা হাঁটছি পূর্ব দিকে। মুক্তিযোদ্ধারা হাঁটছেন পশ্চিম দিকে। ওঁদের দেখলেই আমরা ছোটরা (আমি বেবি ক্লাসের ছাত্র।) জয়বাংলা বলে চিৎকার করে উঠছি। তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন খালিগায়ে কিংবা গেঞ্জি, পরনে হাফপ্যান্ট, লুঙ্গি, কারো ফুলপ্যান্ট।
-এখন বড় হয়ে জানতে পারছি যে, সেই মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন "নিম্নবর্গের যোদ্ধা।" সামরিক অফিসাররা মুক্তিযুদ্ধের কৃতিত্ব তাঁদের দিতে চান না। সাধারণ (অসামরিক) যোদ্ধাদের কেউ বীর প্রতঅকের উপর খেতাব পেয়েছে বলে জানা নেই। সময়ের ধূলামাটিতে তাও দিনদিন আমি, আমরা ভুলতে বসেছি।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৪৪
লেখক বলেছেন: ভাল আছেন ভাই?ও পাড়ার ভাইদের দেখলে অনেক পুরোনো কথা মনে পড়ে.....
যে কয়জন বেসামরিক যোদ্ধাকে খেতাব দেওয়া হয়েছে,তারা হয় কোন কারণে পাদপ্রদীপের আলোয় ছিল,নয়ত তাদের খুব চেষ্টার পরও বাদ দিতে পারেনি।অম্রকাননে অস্থায়ী সরকার গঠনের সময় এমন অনেকে ছিল যাদের আমি পরে কোথাও দেখিনি।এসব স্মুতি হাতড়াতে গেলে গা-গুলিয়ে আসে।ঠেলে বমি আসে !
যে কয়জন বেসামরিক যোদ্ধাকে খেতাব দেওয়া হয়েছে,তারা হয় কোন কারণে পাদপ্রদীপের আলোয় ছিল,নয়ত তাদের খুব চেষ্টার পরও বাদ দিতে পারেনি।অম্রকাননে অস্থায়ী সরকার গঠনের সময় এমন অনেকে ছিল যাদের আমি পরে কোথাও দেখিনি।এসব স্মুতি হাতড়াতে গেলে গা-গুলিয়ে আসে।ঠেলে বমি আসে !
৫. ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৪০
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৪৬
লেখক বলেছেন: সেটা তো যায়ই। দেখি কি করেন তাঁরা !
৬. ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৫৫
মোস্তাফিজ রিপন বলেছেন: হ্যাটস অফ টু ইউ।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:০৪
লেখক বলেছেন: আমাকে এই সন্মান দেওয়ার কিছু নাই। আমি-আপনি যদি বেঁচে থাকা একজন মুক্তিযোদ্ধাকেও সন্মান জানাতে পারি, সামান্য উপকার করতে পারি, সেটাই হবে সত্যিকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।আমরা কী জানি গত বছর "মোবারক" নামের এক দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা অনাহারে মারা গেছেন ? আমরা কী জানি, সেই খবরটা মাত্র একটি কাগজে ভেতরের পাতায় অনাদরে ছাপা হয়েছিল ?!
অন্য একদিন সেই মোবারকের কথা শোনাব।
অন্য একদিন সেই মোবারকের কথা শোনাব।
৭. ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:২৭
মিছে মন্ডল বলেছেন: "সেই ভূখণ্ডে এখন যারা শাসন করছেন, হোক না তার নাম জিয়া-এরশাদ-নিজামী-ফখরুদ্দীন.. এরা কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেনি"
"২০০৪ সালে বিজয় দিবস উপলক্ষে লেখা।"
এই লিখাটা যদি ২০০৪ সালের হয় ,তাহলে ফখরুদ্দীনের নাম আসলো কিভাবে???
"২০০৪ সালে বিজয় দিবস উপলক্ষে লেখা।"
এই লিখাটা যদি ২০০৪ সালের হয় ,তাহলে ফখরুদ্দীনের নাম আসলো কিভাবে???
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:৩৪
লেখক বলেছেন: লেখাটা এডিট করা হয়েছে।সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।শিরোনাম বদলানো হয়েছে।
ফখরুদ্দীনের নাম এসেছে তার সরকার/সময়কাল ' জাতির পিতা ' ইস্যু নিয়ে আরও একবার মুক্তিযুদ্ধ কে হেয় করায়।
@মিছে মন্ডল।
ফখরুদ্দীনের নাম এসেছে তার সরকার/সময়কাল ' জাতির পিতা ' ইস্যু নিয়ে আরও একবার মুক্তিযুদ্ধ কে হেয় করায়।
@মিছে মন্ডল।
৮. ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:৩৪
এরশাদ বাদশা বলেছেন: প্রতিটি অক্ষর, প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি লাইন; নিরেট সত্য। মনে হলো; এ কথাগুলো প্রত্যেকটি দেশপ্রেমিক বাঙালির মনের কথা, আহাজারি।
সবচে দুঃখের বিষয়; আজ জাতির সূর্যসন্তানেরা নিজেদের পরিচয় দিলেই লাঞ্চিত হন। মুক্তিযুদ্ধ করাটা নিশ্চিত ভাবেই তাদের জন্য অপরাধ ছিলো। এ লজ্জা কোথায় রাখি???????/
সবচে দুঃখের বিষয়; আজ জাতির সূর্যসন্তানেরা নিজেদের পরিচয় দিলেই লাঞ্চিত হন। মুক্তিযুদ্ধ করাটা নিশ্চিত ভাবেই তাদের জন্য অপরাধ ছিলো। এ লজ্জা কোথায় রাখি???????/
৯. ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:৩৭
মনজুরুল হক বলেছেন: "সবচে দুঃখের বিষয়; আজ জাতির সূর্যসন্তানেরা নিজেদের পরিচয় দিলেই লাঞ্চিত হন। মুক্তিযুদ্ধ করাটা নিশ্চিত ভাবেই তাদের জন্য অপরাধ ছিলো। এ লজ্জা কোথায় রাখি???????/ "
আপনার বলা এই লজ্জাবোধ যদি কাউকে জাগ্রত করে, তবে সেখান থেকেই শুরু হোক লজ্জা নিবারণের পালা.................
আপনার বলা এই লজ্জাবোধ যদি কাউকে জাগ্রত করে, তবে সেখান থেকেই শুরু হোক লজ্জা নিবারণের পালা.................
১০. ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:০৭
স্বপ্নকথা বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ দেখার ভাগ্য হয়নি । বাবার মুখে শোনা আর বইয়ের পাতায় খোঁজা সবটা । তার পরও রাজাকার গুলোকে দেখলে গলা টিপে মারতে ইচ্ছে করে ।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:১০
লেখক বলেছেন: চলবে........
১১. ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সকাল ৭:৪৩
রাজর্ষী বলেছেন: স্বাধীনতা সংগ্রাম , মুক্তিযুদ্ধকে আবেগ এর সাথে সাথে যুক্তি ও ইতিহাস দিয়ে চর্চা করতে হবে।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৫৬
লেখক বলেছেন: ঠিক।
১২. ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:১৫
সুরভিছায়া বলেছেন: দালালেরা বুদ্ধিমান তাই মরতে চায়নি, ঠিক তবে আবেগ তাদের ছিলনা ,তাই বশ করতে হয়নি । অপূর্ব।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৫৬
লেখক বলেছেন: থ্যাঙ্কস আ লট..........
১৩. ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:১৮
সুরভিছায়া বলেছেন: ভেবেছিলাম রোমান্টিক বা হালকা কিছু ছাড়া অন্য কিছু প্রিয়তে রাখবো না।।এটা রাখতে হল।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৫৮
লেখক বলেছেন: এটা তেমন ভারী কিছু না। প্রিয়তে রাখলেন ! লেখক কৃতজ্ঞ।
১৪. ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:০১
সুরভিছায়া বলেছেন: এটা অনেক ভারী লেখা ,কারন এর বিষয়বস্তুর ভারে আমাদের কাধঁ বেকে যাচ্ছে ,উপায় হয় খুজেঁ পাচ্ছি না অথবা খুজঁতে চাই না ।ধন্যবাদ।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:১০
লেখক বলেছেন:
" উপায় হয় খুজেঁ পাচ্ছি না অথবা খুজঁতে চাই না ।ধন্যবাদ।" এই যে কথাটা বললেন,এটাই হলাম আমরা ! আমরা সুবিধাবাদী মধ্যবিত্তরা সব সময় ভালটা চাই,কোন রকম স্যাকরিফাইস ছাড়াই ।গভীর ভাবনার জন্য ধন্যবাদ.....একদিন আমাদের আত্মস্লঘা জাগরুক হবে..আমরা জয় করব....।
" উপায় হয় খুজেঁ পাচ্ছি না অথবা খুজঁতে চাই না ।ধন্যবাদ।" এই যে কথাটা বললেন,এটাই হলাম আমরা ! আমরা সুবিধাবাদী মধ্যবিত্তরা সব সময় ভালটা চাই,কোন রকম স্যাকরিফাইস ছাড়াই ।গভীর ভাবনার জন্য ধন্যবাদ.....একদিন আমাদের আত্মস্লঘা জাগরুক হবে..আমরা জয় করব....।
১৫. ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:৫৯
তারার হাসি বলেছেন: মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আগামী দিনের বাচ্চারা জানতে চাইবে " আসলেই কি এমন কিছু হয়েছিল , সত্যি সত্যি ? "
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:১১
লেখক বলেছেন: আরো আগামী ?এখনকার বাচ্চারাই প্রশ্নবিদ্ধ করে ! এই সব নিয়ে আলোচনাকে তারা 'টানাহেঁচড়া','বেহুদা মাতামাতি' বলে !
১৬. ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:১২
ফারহান দাউদ বলেছেন: কি বলবো? কি বলার আছে? গণযোদ্ধাদের কথা তো কেউ বলতে চায় না,যারা মিশে গেছেন তারাও এসে আর দাবী তোলেন না।
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৫৯
লেখক বলেছেন: পোশাকি বলাবলির কমতি দেখবেন না।লালটিপ, ওড়না, ফতুয়া, কাঁদো কাঁদো গলা, কাঁপা কাঁপা ভাষণ, সবই পাবেন...শুধু রুখে দাঁড়াবার কোন দিকনির্দেশ পাওয়া যাবে না! কর্পোরেট বেশ্যাবৃত্তির এমনই গুণ !!
ধন্যবাদ ফারহান।
ধন্যবাদ ফারহান।
১৭. ২১ শে নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:০৭
২২ শে নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:২৪
লেখক বলেছেন:
অনেক ধন্যবাদ মেহবুবা। আপনি এত পুরোনো লেখা খুঁজে পেলেন কি করে? আমি নিজেই তো ভুলে বসে আছি! হিপোক্র্যাটের মত আবার ডিসেম্বর এলেই মনে পড়ানোর চেষ্টা হবে!!
অনেক ধন্যবাদ মেহবুবা। আপনি এত পুরোনো লেখা খুঁজে পেলেন কি করে? আমি নিজেই তো ভুলে বসে আছি! হিপোক্র্যাটের মত আবার ডিসেম্বর এলেই মনে পড়ানোর চেষ্টা হবে!!