১২ ফেব, ২০১১

এন্টি গল্প > একাকী জানালায় > ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:০১


খাটটা জানালার ধারে ঠেলে লাগানো ছিল।হাট করে খোলা জানালায় ঠেস দিয়ে লোকটা বসা। তার কোলের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে লোকটার স্ত্রী। দুজনেই গীভর ঘুমে অচেতন।একটা মাছি অনেকক্ষণ ধরে মুখের ওপর হাঁটাহাঁটি করছিল।এবার সাহস করে ঠোঁটবেয়ে নাকের কাছে চলে এলো,একসময় আরো সাহস করে ঢুকে পড়ল নাকের ভিতর ।মাছিটাকে তাড়ানোর সামান্যতম আগ্রহ দেখা গেলনা লোকটার মধ্যে।তারিখটা আষাড়ের উনিশে।

মকবুল হোসেন।আর দশজন সরকারি কর্মচারির মত লিকলিকে দুটো পায়ের ওপর মাঝখানে মোটা শরির আর ছোট ঘাড়ের সাথে বেমানান নারকোল সাইজের মাথা নিয়ে প্রমোশন ইনক্রিমেন্ট ইত্যাদি উতরে এসেছিলেন। অন্যদের মত চামচে করে কারো পেট থেকে উতকোচের টাকা বের করতেন না।সকাল সন্ধে রাত আবার সকালে আর পাঁচ জনে যা যা করে মকবুল সায়েবও তাই করতেন ।জীবনে যেমন কোনো বড় ধরনের হ্যাপা ছিল না তেমনিসুখ-শান্তির নহরও বয়ে যেতনা ।একদিন হঠাৎ দেখলেন ত্রিশটা চক্করও দেননি রমনায়, অথচ জীবন থেকে খসে গেছে ত্রিশটা বছর !

যেদিন অফিস থেকে ফেয়ারওয়েল জাতীয় কিছু একটা দিয়ে 'আমাদের কথা মনে থাকবে তো মকবুল সায়েব?" বলে সকলে হাত মেলাল সেদিনই বুঝলেন...আর তার চাকরি নেই !

এর পর মকবুল এর বাড়ির সামনে দিয়ে অনেক শুকনো বাতাস বয়ে গেছে । ঘোলাটে সূর্য অনেক গরল ঢেলে গেছে বিনা বাঁধায় ।মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন,দুই ছেলে বিদেশে চলে গেছে ,এবং কিছু বুঝতে না বুঝতে ওরা দুজন একা হয়ে গেছেন ।ছেলেরা আগে চিঠি লিখত, পরে মোবাইল হওয়ার পর খুব ভোরে ভোরে ফোন করত। ছোটটা একবার বলেওছিল.....'পেপারস টেপারস রেডি করছি,তোমাদের নিয়ে আসব স্টেটসে..'বড়টা বলত...'বাবা শীতে খুব কষ্ট হয়,মাকে দিয়ে যদি একটা পুলওভার বানানো যেত..'নালায়েকটা বোঝেনি ওর মা আর চোখে দেখেনা...।

কিছু দিন থেকে ওরা দুজনই বুঝতে পারছে ওদের বাড়িতে আর কেউ আসছেনা ।আত্মিয় স্বজনরা ফোনেই সেরে দেয় ।মকবুল সায়েবের বাড়িটা শহরের পুব প্রান্তে হওয়ায় একটুআধটু পুবান বাঁও শির শির করে পরশ বুলিয়ে যায় । একদি একটু জোরের সাথে বাতাস হতেই চমকে ওঠেন মকবুল.. গিন্নিকে ডেকে বলেন..'আচ্ছা কত দিন হবে কেউ খোঁজখবর করেনি?'গিন্নি মনে করিয়ে দেয়..প্রায় চার মাস! ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে শ'খানেকবার পড়ে ফেলা 'মানবচরিত'বইখানা নিয়ে জানালার ধারে গিয়ে বসেন।

তারও এক মাস পর্যন্ত দুই ছেলের ফোন আসেনা ।মেয়েরা কর্পোরেট লেডি হওয়ার দৌড়ে বাবা মাকে ফোন করার ফুরসত্ পায়না।এ সময় একদিন গিন্নি বলে....'জীবনটা খুব একঘেয়ে হয়ে গেল না?'মকবুল অবাক হয়ে ভাবে...'এত বছর বাদে বউটা র বুদ্ধি হলো তাহলে..'মকবুল জেনেছিল আজকাল কেউ চিঠির উত্তর দেয়না। ফোন করে দেখেছিল কেউ দুমিনিট কথা বলতে চায় না ।
তারও মাসখাকে বাদে দুজন ড়াক্তার বন্ধুকে দেখিয়ে এসেছিল। কিছুদিন ধরে ঘুম হচ্ছিল না। বন্ধু বলেছিল ..ইনসোমনিয়া ।সেদিন রাতে মকবুল সাহেব দু'পাতা ট্যাবলেট কিনে এনেছিল।খাওয়াদাওয়ার পর দুজনেই বড়িগুলো খেয়েছিল.....তারপর জানালার ধারে গিয়ে বসেছিল...গিন্নি কোলের উপর মাথা রেখে শুয়েছিল... তারিখটা আষাড়ের উনিশে......। আমরা কেউ জানিনা ওরা হেভি ডোজ নিয়েছিল কীনা। সম্ভবত একমাত্র মাছিটাই বুঝেছিল যা বোঝার...............।


লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): গল্পখাটটা জানালার ধারেগল্পখাটটা জানালার ধারে ;
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১০ রাত ১২:৫৩


  • ২৮ টি মন্তব্য
  • ৪৫১ বার পঠিত,
Send to your friend Print
পোস্টটি ১৫ জনের ভাল লেগেছে
১. ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:০৬
রাতমজুর বলেছেন: এটাই বাস্তবতা, প্রবীনদের খুব একলা করে ফেলি আমরা, ভাবিওনা, একদিন আমরাও বুড়িয়ে যাব।
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৫৮
লেখক বলেছেন: প্রতি দিনই বয়স বাড়ে
প্রতি দিনই বয়স কমে
বাড়া আর কমার এই অংক কত যে ভুলভাল তা বুঝতে বুঝতেই তো সময় শেষ !
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:০১
লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ:D
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:০২
লেখক বলেছেন: আমারও সেই মত।
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:০৪
লেখক বলেছেন: অলঙ্ঘনীয় ভাবে মাছিই সঙ্গী হয়।তারপর পিঁপড়ে,পোকামাকড়,এবং একসময় শুধুই হাড়ের কাঠামো......................
৫. ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৩৬
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:০৫
লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ।
অত:পরও ধন্যবাদ।
৬. ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৪৮
মুজিব মেহদী বলেছেন: সন্তানসংস্রবহীন এরকম বর্ষীয়ানদের কথা ভেবেই বোধকরি 'প্রবীণ হিতৈষী সংঘ' গড়ে উঠেছে। ওখানে আর যা কিছুরই সংকট থাকুক, সংঘের অভাবটা খানিকখানি ঘুচে। তাহলে অন্তত ট্যাবলেট খাওয়া লাগে না।

আচ্ছা, মকবুল সাহেব একা কোথায়? কোলে শোয়া তাঁর স্ত্রী আছে তো। একটা জ্বলজ্যান্ত মানুষ মিথ্যা হয়ে গেল! যতই তিনি ঘুমিয়ে থাকুন। ঘুমিয়ে তো মকবুল সাহেব নিজেও।
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:০৭
লেখক বলেছেন: কোলে যিনি আছেন তিনিও হেভিডোজ মেরে ঘুমিয়েছেন মকবুলের মত। শেষ ঘুম।

ধন্যবাদ মেহদী ভাই।
৭. ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:১৪
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:০৭
লেখক বলেছেন: কি আর করা যাবে ভাই, জয়ের গল্প লেখার চেষ্টা তো কম করলাম না !হলো কই ?
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১:১০
লেখক বলেছেন: হুমম !
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৪৭
লেখক বলেছেন: তা বেশ।
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৪৬
লেখক বলেছেন: ভাল লাগলেই ভাল।অন্তত নিরাশ করলাম না তো ?
১১. ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:১৯
১২. ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:২৬
মনজুরুল হক বলেছেন: আমি ভাল। আপনি ভাল তো ?
ব্লগপেজে চেপে লিখতে হয়েছে। আরো খানিকটা বড় করা যেত। তাতে করে হয়ত ক্লাইমেক্সটা আরো একটু টান টান হতে পারত ।
১৩. ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:৩২
১৪. ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:৫১
নুশেরা বলেছেন: প্রথম দুটো প্যারার প্রচন্ড টানটান ভাবটায় পরে একটু যেন শৈথিল্য এসে গেছে বলে মনে হল। মন্তব্যে লেখকের কথায় বুঝলাম ঠিকই ধরেছি :)

অপরাধবোধে ভোগালেন; মাসখানেক হয়ে গেল দেশে ফোন করিনা। অনেক মিথ্যে কথা বলতে হয়... ভাল লাগেনা... ... ...
১৫. ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৬:১০
ছন্নছাড়ার পেন্সিল বলেছেন: অদ্ভুত ভালোলাগা। আমি একটু কম জানি, এটাকে কেনো এন্টি গল্প বলছেন? এটার ব্যাখ্যা দিলে খুশি হতাম। কারণ লেখাটা আমাকে বেশ তাড়িত করছে।
১৭. ১৯ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ২:২৪
হিমালয়৭৭৭ বলেছেন: মাছিরা অনেক কিছুই বুঝে নেয়, মাছির আইকিউ বোধহয় বেশ ভাল।।

এই থিমে আমারও একটা গল্প আছে, তবে স্টাইল আর পরিসরটা একটা আলাদা হতে পারে, যদি মূল সুর একই বলেই ধারণা করছি।।
Click This Link
১৯ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ৩:০৬
লেখক বলেছেন:
ধন্যবাদ। লিংকটা সেইভ করলাম। পরে পড়ে নেব।
এখন মহাব্যস্ত, সরি, কিছু মনে করবেন না।

কোন মন্তব্য নেই: