১২ ফেব, ২০১১

এন্টি গল্প > আমার সেই বৃষ্টিভেজা সময় সেই সময় যা তোমার বিছানার পাশে পড়ে আছে সেসব ফিরিয়ে দাও > ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৪০


নন্দিতা হেঁটে চলে গেল দিকচক্রবাল ধরে।আকাশ আর মাটি যেখানে মিশে গেছে, সেখানে অতদূর দৃষ্টি যায়না। তবুও আবছা কাঠামো যেন চোখে পড়ে.....নন্দিতা হেঁটে চলে গেল। এখানে বাতাস নেই,কিন্তু ওখানে এখনো দেখা যাচ্ছে নন্দিতার আঁচল উড়ছে....মেটালিক ব্লু রঙের আকাশে সাদা আঁচল।নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে জাহাজের ভেপু ভেসে আসে।নৌকা বেঁধে মাঝি- মাল্লারা গলগল করতে করতে ঘরে ফেরে.....

দু’খানা কামরার এই ঘরটিতে অয়ন এখন একা।একটু আগেই দু’জন ছিল।তার ও আগে ছিল তিন জন। সুরভি আর সুপ্তি।অয়ন সুরভির প্রেম-বিয়ে-সংসার এবং জৈবিক নিয়মে সুপ্তি।সুপ্তির আগমনে অয়নের অর্ন্তদাহ কিছুদিনের জন্য সরে গেলেও আবার এসেছিল। অসময় এমনই হয়। একেবারে চলে যায় না। বিরতি দিয়ে দিয়ে আসে। যেমন আজ এসেছিল নন্দিতা। মোটেই প্রস্তুত ছিল না অয়ন। আচমকাই যেন নন্দিতার এন্ট্রি।সোজা এসে জানালার ধারের চেয়ারটিতে বসেছিল।টানাকুড়ি মিনিট পর অয়নই প্রথম কথা বলেছিল।

_সেই তো এলে,কিন্তু কত দেরি করে এলে। যদিও কিছুই হতো না ,তবুও যদি আর একটু আগে আসতে।
_তুমি চাইলেই আমি আসতাম।চাওনি তুমি।
_চাওয়াটাওকি ঘোষণা দেয়ার ব্যাপার ? বোঝার চেষ্টা তো করনি ?
_করেছি।আর করেছি বলেই সময় শেষ করে এলাম।আমি জানি আরো আগে এলেও তোমাকে পেতাম না। তোমার খালি হয়ে যাওয়া জীবনে অনেকটা জায়গা কাউকে নেয়ার অপেক্ষায় থাকলেও সেখানে আমার সংকুলান নেই। এ বোঝা কি আগে হয়নি ? হয়েছিল,তবুও আমি জানি,আমার সেখানে অস্তিত্ব নেই।

এটানা কথা বলে নন্দিতা মাথা নিচু করে দম নিয়েছিল।বুকটা উঠছিল-নামছিল।অয়ন নন্দিতার কথা এর কথা শেষ হওয়ার পরের মুহূর্তগুলো নিবীড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল।ওর হাতের আঙ্গুলগুলো কি একটু একটু কাঁপছে? অভিমানে নাকের বাঁশিদুটো একটু কি ফুলে উঠেছে? ঠোঁটদুটো কি তির তির করে কাঁপছে? মাথাটা নোয়ানো,কিন্তু গ্রিবা তো সেই উদ্ধোত। সেই চেনা নন্দিতা।এতটুকুও কি বদলায়নি?

অপমানিত হতেই এসেছে নন্দিতা।জানে অয়নের স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে,এবং গেছে নন্দিতারই কারণে।তাহলে কেন নন্দিতা সব ছেড়েছুড়ে অয়নকে আপন করে নিচ্ছে না? নাকি এক্ষুনি অয়ন সেই আগের মত ঝাঁপিয়ে পড়বে? পাঁজাকোলে করে একটা পাক ঘুরে ধপাস করে ফেলে দেবে ? তারপর শিশুদের মত গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলবে,কেঁদোনা লক্ষীটি,এই দেখ তোমার জন্য কী এনেছি.....নাহ,অয়ন কিছুই করল না সেসবের ! নন্দিতা মাথা নিচু করে থাকলেও অনুভবে দেখার চেষ্টা করছিল অয়নের পরবর্তি প্রতিক্রিয়া।টিকটিক করে অশান্ত সময় বয়ে চলে যায়। দুটো প্রাণীর নিশ্বাস আর বাইরে গাছের পাতায় বাতাসের খসখসানি ছাড়া কিছু নেই।দীর্ঘ বিরতির পর নন্দিতা সরাসরি অয়নের দিকে তাকিয়ে বলে ফেলে সেই কথাটা,যা বলার জন্য ও এসেছে....................

_অয়ন,আমার সেই পুরোনো সময়গুলো ফেরত চাই।অয়ন নিঃস্পলক চেয়ে থাকে কেবল।ভাবতে চেষ্টা করে কি কি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা তার....সারাটা রাত কেটে যায় না বলা কথা বলার চেষ্টায়।পুব আকাশের অনেকটা জায়গা জুড়ে রাঙা হতে শুরু করেছে।ঘুমভাঙ্গা পাখিরা ডানা মেলেছে।ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ উদ্দেশ্যহীন ভেসে চলেছে।সাদা বকেরা দলধরে উড়ে যাচ্ছে ঠিকানাহীন।

ক্যাসেটপ্লেয়ারে বেঁজে চলেছে আশা ভোঁশলের সেই গান যা ওরা কখনোই শুনতে চাইত না,কিন্তু রোজই শুনত....মেরে কুছ সামান....তুমহারি পাছ পড়ি হ্যায়....মেরে উয়ো সামান লওটাদো.....

নন্দিতা হেঁটে চলে গেল দিকচক্রবাল ধরে।আকাশ আর মাটি যেখানে মিশে গেছে, সেখানে অতদূর দৃষ্টি যায়না। তবুও আবছা কাঠামো যেন চোখে পড়ে.....নন্দিতা হেঁটে চলে গেল। এখানে বাতাস নেই,কিন্তু ওখানে এখনো দেখা যাচ্ছে নন্দিতার আঁচল উড়ছে....মেটালিক ব্লু রঙের আকাশে সাদা আঁচল। নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে জাহাজের ভেপু ভেসে আসে।নৌকা বেঁধে মাঝি- মাল্লারা গলগল করতে করতে ঘরে ফেরে.....





লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): এন্টি গল্পনন্দিতাএন্টি গল্পনন্দিতা ;
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১০ রাত ১২:৫২


  • ১৭ টি মন্তব্য
  • ২১৩ বার পঠিত,
Send to your friend Print
পোস্টটি ৭ জনের ভাল লেগেছে
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:০৫
লেখক বলেছেন: অগত্যা................

ধন্যবাদ।
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:০৬
লেখক বলেছেন: পরকীয়ায় বোধহয় এরকমই হয়। তার পরও এই পয়ার টা শক্তিমান...................................................................

নামাজ পড়তে শোলাকীয়া
প্রেম করলে পরকীয়া.......
৩. ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:২৫
এরশাদ বাদশা বলেছেন: শুরুর স্টাইলটা যেনো অসাধারন কবিতা। তারপর প্যারাটা খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে কোন বড়ো গল্পের অবতারনা। যদিও আপনি ব্যাপকতায় যাননি।

তারপর আবার কবিতা....

অসাধারন আপনার লেখনি, মনজুর ভাই। হৃদয়ছোঁয়া।
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:১১
লেখক বলেছেন: হ্যাঁ লেখাটা আরো সংক্ষিপ্ত করতে চাইছিলাম।সংক্ষিপ্ত কথায় সব আবার বলাও যায় না।
ধন্যবাদ আপনাকে।
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:১২
লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ শামীম।
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:৩২
লেখক বলেছেন: হ্যাঁ। ভাল। তবে ২টা জিজ্ঞাসাবোধকে কিঞ্চিৎ বিভ্রান্ত ! আপনি ভাল তো ?
৬. ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:৪২
নুশেরা বলেছেন: মনজুরুল হক কেমন লেখেন সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে আমার পর্যবেক্ষণ বলছে অন্য এন্টিগল্পগুলোর তুলনায় একটু কম সময় নিয়ে লেখা।
আরও কিছুক্ষণ ধরে পড়তে চেয়েছিলাম... আরেকটু বড় হলে :)

(অফটপিক- ইজাজত ছবিটা খুবই প্রিয়। হয়তো গুলজারের সংলাপ আর লিরিকের জন্য। আমার ভরসা ইংরেজি সাবটাইটেল। সময় পেলে গুলজারের কিছু গীতিকবিতার অনুবাদ করুন না, মনজুরুল ভাই)
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৬:০০
লেখক বলেছেন: সময় জিনিষটারই বড় অভাব আমার।রুটি রুজির জন্য শ্রম,ডুবতে থাকা 'ভোরের কাগজ' কে বাঁচিয়ে রাখার হাস্যকর চেষ্টা করা, সংসারঘানি কে টেনে নিয়ে চলা,কাগজঅলাদের চাহিদা মিটিয়ে লেখা তৈরি করা,তারপর ব্লগে ঘ্যানোর ঘ্যানোর করে সময় হয় না।

আপনার অনুরোধ মনে থাকল। অবশ্যই চেষ্টা করব। শুভেচ্ছা রইল।
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৬:০৭
লেখক বলেছেন: আমিও কোন বিশেষ কারণে বলিনি। এম্নিই কথার কথা। শুভকামনা।
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৬:১৩
লেখক বলেছেন: বেশ।শুভেচ্ছা।:)

কোন মন্তব্য নেই: