১৫ ফেব, ২০১১

আঠার চাঁদের শুক্লপক্ষে জলকন্যা



০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৩:৩০

আঠার চাঁদের শুক্লপক্ষ,কৃষ্ণপক্ষ পার হয়ে গেল,
ভরা কোটালে বহুবার জল স্ফিত হয়ে আবার
সরে গেছে সেখানে, যেখানে জলেদের বাস।
আঠার চাঁদের আগের সেই কাঁকড়ারা,শামুকেরা,
ডানকানা মাছেরা,শ্যাওলায় মুখ লুকোনো
সবুজাভ অক্টোপাসেরা বড় হয়ে উঠেছে।
জলকন্যা বলে গেছিল-আসবে শুক্লপক্ষে।

আঠার চাঁদের শুক্লপক্ষ,কৃষ্ণপক্ষ ঠাঁয় বসে আছি,
ওই যে যারা শিশু ছিল,তারা এখন বড় হয়ে
কাছে আসে,চিনতে পারে,লেজ দুলিয়ে বলতে চায়-
বাছা,কেন মিছেমিছি বসে থাকা?জলকন্যা আসে না,
জলকন্যারা আসে না,জলে যার বাস সেকি আসে?
কোথা থেকে আসে?জলের তো শুরু আর শেষ নেই!
মন বলে,আসবে,জলকন্যা কথা দিয়েছিল,
শুক্লপক্ষে আসবে, আসবেই।

উনিশ চাঁদের শুক্লপক্ষে সেদিন আলোতে ভরে
গেছিল প্রান্তর,চাঁদ নেমে এসেছিল হাতের নাগালে,
ছুঁতে পারা দূরে সার দিয়ে চেয়েছিল ছোট মাছেরা।
যেখানে আকাশ আর সাগরের নীল এক হয়ে মেশে,
সেই দিগন্ত রেখা দিয়ে জলে হেঁটে আসছে জলকন্যা।
অভিভূত আমি পলক ফেলিনি,পাছে হারাই তাকে!
পলকহীন চোখ বেঈমানী করে!ঘোর লাগা ঘোরে
তাকে আর দেখি না!ঝাঁপ দিতে চাই অমোঘ সে টানে,
ভ্রুকুটিতে শাসায় চাঁদ,জলরাশী আর মাছেরা।
যখন বুকের ভেতর গুমরে ওঠা হাহাকার উঠে
এসে জমে ঠোঁটে,যখন চেপে রাখা ঠোঁট দুভাগ
হয়ে তৈরি হয় অপার্থীব গোঙ্গানিতে, ঠিক তখন,
জল মেখে সারা গায়ে উঠে আসে সে।জলকন্যা।

আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে থাকি পলকহীন।
আমি অপার্থীব আতংক আর অনিমেষ আকর্ষণে
হাত বাড়াই,ছুঁয়ে দেখি,ভেজা চুলের জল গড়ায়
টপ টপ,শুক্লপক্ষের আলোয় জলের সে ফোটা
রং ছড়ায়,লাল,নীল,বেগুনী আর অচেনা সব রং।
মুক্তোদাঁতের চাঁদঝিলিকে ভরে যায় মুখ,চোখ আর ঠোঁট।
যে স্বপ্ন কেউ দেখে না,যে ছবি কেউ আঁকে না,
তেমনই ছবি আঁকি,আর সর্বান্তকরণে দেখি,
দেখি আমার আজন্ম স্বপ্নকে,আমার স্বপ্নের ছবি কে,
আমার আঠার চাঁদের অপেক্ষায় পাওয়া জলকন্যা,
অর্ধনারী মৎসশরীরে বাস্তবতায় অবাস্তব মৎসকন্যা।

কোথায় রাখব কি ভাবে রাখব তারে?সে জানে,
যেন আমারই মত সে ভাবে,খিল খিল হেসে বলে-
কোথায় রাখবে বল?
আমি ভাবি,অসহায় মানুষের মত ভাবি,প্রেমহীন
মানুষের মত ভাবি,অবশেষে স্বার্থপর মানুষের মত
কাছে টানি,পেতে চাই,আমার পাওয়া,আমার সবটুকু
পেতে চাই।আমার যত সম্পদ,তার বিনিময়ে পেতে চাই,
সারা পৃথিবীর বিনিময়ে পেতে চাই.........................

রাত ভোর হয়ে এলে,চাঁদ আরো হেলে গেলে,
মাছেরা সরে গেলে আমার অসম্ভব চাওয়াগুলো
জলে ধুয়ে সে ঝাঁপ দেয় জলে,অজান্তে বাড়ানো হাত
শূণ্য ফিরে আসে।
কল কল জল ভেঙ্গে যেতে যেতে বলে যায়-
কোন এক শুক্লপক্ষে এসো তুমি,বসো ঠিক ওইখানটায়.........

ঘোর লাগা ঘোরে আরো একবার মনে পড়ে,
আরো একজন যাবার আগে বলে গেছিল-
প্রেশারের বড়িটা,চায়ের চিনিটা,চোখের চশমাটা,
দেখে রেখ,মনে রেখ,ভাল থেক,স্বপ্ন দেখ...
কল কল জল ভেঙ্গে যেতে যেতে বলে যায়.........

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): জলকন্যাজলকন্যা ;
প্রকাশ করা হয়েছে: কবিতা  বিভাগে । সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১০ রাত ৩:২৭


  • ৩০ টি মন্তব্য
  • ৪৭৬ বার পঠিত,
Send to your friend Print
পোস্টটি ১০ জনের ভাল লেগেছে
১. ০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৩:৫৭
তারার হাসি বলেছেন: জীবন বহতা নদী।
শেষ হইয়াও হইল না শেষ।
এই প্রথম আমি ব্লগে পড়লাম ৫৮ লাইনের একটি কবিতা, ৪ বার পরপর !
০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:১৮
লেখক বলেছেন: এত বড় কবিতা চার চার বার পড়লেন?

আমি খেয়াল করেছি,আপনি আমার সব লেখাতেই অসম্ভব সুন্দর মন্তব্য করেন।তাড়াহুড়োয় আপনার মন্তব্যের যথাযথ সাড়া হয়ত দিতে পারিনি,মার্জনা করবেন।

আমি নিজে কখনো আমাকে মার্কস দিতে পারি না।হয়ত কবিতা বিষয়ে আমার কনফিডেন্স কম তাই।

ভাল থাকুন।আনন্দময় হোক আপনার দিনগুলি.............................
২. ০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:০৩
রুবেল শাহ বলেছেন: কয়েক বার পড়লাম................

কি বলব আমি ভাষা জ্ঞাণহীন ........ আমার বলা এত টুকুই

ভাল লাগা ও শুভেচ্ছা রেখে গেলাম.............

ভাল থাকা হয় যেনো
০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:২০
লেখক বলেছেন: "ভাল থাকা হয় যেনো "

এইমাপের 'হুকুম' যখন হয়েছে,তখন ভাল না থেকে উপায় আছে.........
ভাল থাকবেন রুবেল।অবশ্যই।
৩. ০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:২৯
০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:৪২
লেখক বলেছেন: আপনিও ভাল থাকুন। আনন্দে থাকুন।
৪. ০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:২৯
সুলতানা শিরীন সাজি বলেছেন: ঘোর লাগা ঘোরে আরো একবার মনে পড়ে,
আরো একজন যাবার আগে বলে গেছিল-
প্রেশারের বড়িটা,চায়ের চিনিটা,চোখের চশমাটা,
দেখে রেখ,মনে রেখ,ভাল থেক,স্বপ্ন দেখ...
কল কল জল ভেঙ্গে যেতে যেতে বলে যায়.........

তাহলে কে বেশী মায়াময় মৎস্যকন্যা নাকি মানবী?:)
এত দারুন লিখেছেন.......এই রকম কবিতা অজস্রবার পড়া যায়।
মুগ্ধতা রেখে গেলাম.....
ছোটবেলায় একটা বই পড়েছিলাম...বলা যায় এক দমে...।তিন থেকে চার ঘন্টা লেগেছিলো পড়তে।মৎস্যকন্যার গল্প.....কি যে দারুন লেগেছিলো...
এখনো মনে পড়ে...
ভালো থাকবেন....শুভেচ্ছা।




০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:৪৮
লেখক বলেছেন: নিশ্চই মৎসকন্যা, কারণ সে বলে গেছে শুক্লপক্ষে আসবে।
মানবী মঙ্গল কামনা করে গেছে,ফিরবে বলেনি...............

আমারও তাই।'মারমেইড' আর 'ফ্লাইংম্যান' এই দুই আপাত: অবাস্তব বিষয় নিয়ে মাঝে মধ্যেই ভাবি। ভাবিই শুধু..................

শুভেচ্ছা।
৫. ০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:২৯
২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:০২
লেখক বলেছেন: আপনিও ভাল থাকবেন।
৬. ০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:৩৬
না বলা কথা বলেছেন: শেষ পর্যন্ত পড়তে না পাইরা যেই পথে আইলাম সেই পথেই ফিরা গেলাম।
০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:৪১
লেখক বলেছেন: যাবার সময় একটা মাইনাস ও দিয়ে গেলেন? শুভেচ্ছা নিন।
৭. ০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৬:৫৫
দূরন্ত বলেছেন: ভালো লাগলো। অসম্ভব সুন্দর লিখেছেন।
শুভেচ্ছা...
০৯ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:১৭
লেখক বলেছেন: 'অসম্ভব' টুকু বাদ দিলে হয় না ভাই ....
৮. ০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ৮:০৩
নাসিমূল আহসান বলেছেন:
কেমন জীবনবাবুর গন্ধ সারা কবিতার গায়ে ! কেমন করে যেন জড়িয়ে যায় কবিতা আর বাস্তবতা। কেমন করে হাত ফসকে পালায় আমাদের সব জলকণ্যারা! হা: হা: হা: একটু কাব্যি করলাম!

০৯ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:২০
লেখক বলেছেন: বেশ করেছেন।পোড় খাওয়া,ঘা খাওয়া মানুষদের ঐ কাব্যি করা ছাড়া আর কী আছে? আমি তো তা-ই করে চলেছি......।অর্পিত দায়িত্ব বাদ দিয়ে........
৯. ০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৯:৫০
জাতিশ্বর বলেছেন: "ঘোর লাগা ঘোরে আরো একবার মনে পড়ে,
আরো একজন যাবার আগে বলে গেছিল-
প্রেশারের বড়িটা,চায়ের চিনিটা,চোখের চশমাটা,
দেখে রেখ,মনে রেখ,ভাল থেক,স্বপ্ন দেখ...
কল কল জল ভেঙ্গে যেতে যেতে বলে যায়.........



এক্সিলেন্ট!
০৯ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:২১
লেখক বলেছেন: বেশ। তাহলে এক্সিলেন্টই থাকুক।
১০. ০৯ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:২৩
দূরন্ত বলেছেন: কবিতাটা আমার কাছে সত্যিই অসম্ভব ভালো লেগেছে...
০৯ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:৩৩
লেখক বলেছেন: আমি 'অসম্ভব সুন্দর' এর দাবিদার নই।এতবড় বোঝা মাথায় তুলে দিলে ঘাড় ভেঙ্গে যেতে পারে !!

ধন্যবাদ আপনাকে।
০৯ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৪:৪৭
লেখক বলেছেন: |-)
১২. ০১ লা জুলাই, ২০০৯ রাত ১১:৫১
অপ্‌সরা বলেছেন: মাইগড!! সোজা প্রিয়তে ভাইয়া।
কঠিন হলেও কবিতাটা বুঝেছি। তোমার অন্য কঠিন লেখাগুলো থেকে স হজ ।
০২ রা জুলাই, ২০০৯ রাত ১:৫৩
লেখক বলেছেন:
না বুঝে উপায় আছে ভাইয়া! এ তো কবির আকুতির খুল্লামখুল্লা বয়ান! থ্যাংকস, এটাই তোমার শো-কেসে আমার প্রথম লেখা!!

আমার মনে হয় "আপগ্রেডেশন" হলো... হা হা হা!!
১৩. ০৩ রা জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১:১৪
অপ্‌সরা বলেছেন: ইশ আপগরেডেশানের কি ???????

শুনো তোমার জন্য আমি এই প্রথম মানে অপসরা লেখিকা গল্প লিখলো । নতুন পোস্ট দেখো ভাইয়া। তোমার কথা শুনে লিখতে গেলাম বলেই ওদের কথায় মাথাতে এলো যাদের কথা তুমি ভাবো। যাদের কথা তুমি লেখো।
০৪ ঠা জুলাই, ২০০৯ রাত ১:০০
লেখক বলেছেন:
আর সেই জন্য আমার ছোট্ট বোনটির গল্প এত সুন্দর হয়েছে। কমেন্ট করে এসেছি। আমার বিশ্বাস তুমি গল্পটা লেখার পর তোমার নিজেকেই অন্য রকম লাগছে। তোমার মনে হচ্ছে, তুমি সামান্য হলেও অবহেলিত মানুষের কাছাকাছি যেতে পেরেছ। এটাই আমার বিচারে তোমার আপগ্রেডেশন।
১৪. ০৫ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:০৯
সহেলী বলেছেন: শেষ কথাগুলো পরিচিত মনে হোল !
এখনও যেন শোনা যায় !

এত বেশী ভার , ভারাক্রান্ত করে দেবে -- দূরে থাক এ কবিতা ।
০৬ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ১:০৬
লেখক বলেছেন:

ভালবাসার অন্তর্নিহিত শর্তই হচ্ছে কষ্ট। বুকভরা কষ্ট। সেই কষ্টকে যে যত নিপুণ ভাবে বর্ণনা করতে পারে সে সফল কবি। আমি কবি নই, কিন্তু কষ্টটা কারো চেয়ে কম নয়।

আসুন, আরো একবার ভারাক্রান্ত হই।

আরো একজন যাবার আগে বলে গেছিল-
প্রেশারের বড়িটা,চায়ের চিনিটা,চোখের চশমাটা,
দেখে রেখ,মনে রেখ,ভাল থেক,স্বপ্ন দেখ...
১৫. ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:১৫
ত্রিশোনকু বলেছেন: "ঘোর লাগা ঘোরে আরো একবার মনে পড়ে,
আরো একজন যাবার আগে বলে গেছিল-
প্রেশারের বড়িটা,চায়ের চিনিটা,চোখের চশমাটা,
দেখে রেখ,মনে রেখ,ভাল থেক,স্বপ্ন দেখ...
কল কল জল ভেঙ্গে যেতে যেতে বলে যায়......... "

সাবলিল, আধুনিক!
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৩৩
লেখক বলেছেন:

প্রেশারের বড়িটা,চায়ের চিনিটা,চোখের চশমাটা,
দেখে রেখ,মনে রেখ,ভাল থেক,স্বপ্ন দেখ...
কল কল জল ভেঙ্গে যেতে যেতে বলে যায়.........

কোন মন্তব্য নেই: